ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৫, ০৫:০৪
বাণিজ্যিক ডেস্ক
ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ঘনিষ্ঠ ১০ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নামে দেশে-বিদেশে অর্থপাচার এবং আমিরাতে বিপুল সম্পদের তথ্য মিলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদক, সিআইডি, বিএসইসি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ছয়টি সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত চালাচ্ছে।
ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব ব্যক্তির নামে ও বেনামে শতাধিক ফ্ল্যাট, বিনিয়োগ ও ব্যবসার সন্ধান পাওয়া গেছে।
সরকার জানায়, এই সম্পদ উদ্ধারে ইউএই-এর সঙ্গে যৌথ আইনি সহায়তা চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের প্রধান ড. আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে আমিরাতে অবস্থান করছেন।
তিনি ইউএই-এর মানি লন্ডারিং ইউনিট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন।
কার কত সম্পদ, কী পদক্ষেপ
- সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আরামিট গ্রুপের কর্ণধার সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের নামে আমিরাতে ২২৮টি অভিজাত ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো কিনে আবার বিক্রি করা হয়েছে।
- বেক্সিমকো কর্ণধার সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তিনি আমিরাতে শেল কোম্পানি গঠন করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
- ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম ইউরোপীয় দেশ আলবেনিয়ার নাগরিকত্ব নিয়ে আমিরাতে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।
- জেমকম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও আরও কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর নামেও বেনামি বিনিয়োগ ও সম্পদের প্রমাণ মিলেছে।
- শেখ হাসিনা পরিবারের একজন সাবেক আত্মীয়ের নামেও সম্পদের তথ্য এসেছে, যিনি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালে সুবিধাভোগী ছিলেন।
আইনি চুক্তি ও টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ
সরকার ইতোমধ্যে আমিরাতসহ ১০টি দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স চুক্তি (এমএলএটি) করতে উদ্যোগ নিয়েছে।
এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও আমিরাত।
ইউএই ও মালয়েশিয়ার চুক্তির খসড়া বাংলাদেশের হাতে এসেছে। হংকং ও চীনের খসড়াও পর্যালোচনায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যে ৮১টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
তাদের সহায়তায় পাচার করা সম্পদের তথ্য সংগ্রহ ও ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে।
সামনের পথ
সরকারের তরফে জানানো হয়, তদন্তে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে ইউএই সরকারের কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে।
চূড়ান্তভাবে চুক্তি সম্পন্ন হলে এসব দেশের সহায়তায় পাচার করা অর্থ ও সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হওয়া জরুরি। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নয়, প্রয়োজন দেশীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছাও।