ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার (৬ জুন) কাশ্মীর সফরে গিয়ে অঞ্চলের নতুন একটি কৌশলগত রেলপথ উদ্বোধন করেছেন। এই রেলপথের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে আর্চ ব্রিজ হিসেবে চিহ্নিত চেনাব ব্রিজও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে।
কাশ্মীরকে “ভারতের মুকুট রত্ন” হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠান ভারতের ঐক্য ও দৃঢ় প্রত্যয়ের একটি মহান উৎসব।”
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে চারদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের এক মাস পর এই প্রকল্প উদ্বোধন হলো।
মোদি বলেন, “পাকিস্তান তার লজ্জাজনক পরাজয় কোনো দিন ভুলবে না।”
বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে আর্চ ব্রিজ হিসেবে চিহ্নিত চেনাব ব্রিজ নদীর ৩৫৯ মিটার ওপরে নির্মিত। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী এটি চীনের নাজিয়েহে ব্রিজকেও ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “এই ব্যতিক্রমী স্থাপত্যের নিদর্শন যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।”
৩৬টি সুড়ঙ্গ ও ৯৪৩টি সেতু নিয়ে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথটি জম্মুর উদমপুর থেকে শুরু হয়ে শ্রীনগর এবং বারামুল্লা পর্যন্ত পৌঁছেছে। নতুন এই পথ কাঠরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত যাত্রার সময় অর্ধেকে কমিয়ে আনবে।
এর ফলে পণ্য পরিবহন, সাধারণ মানুষের চলাচল এবং সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তৈরি হবে। আগে এই অঞ্চলে চলাচলের জন্য দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা বা আকাশপথ ছাড়া বিকল্প ছিল না।
তবে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের উপকণ্ঠে এই প্রকল্পের বিরোধিতায় প্রায় ১৫০ জন মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভের আয়োজক আজির আহমাদ গাজালি বলেন, “উন্নয়নের নামে সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করে কাশ্মীরের জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা দমন করা যাবে না।”
গত মাসের সংঘাতে প্রায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এই লড়াই শুরু হয়েছিল ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার পর। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রিকরণের দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে।
এছাড়া, মোদি সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সরকারি সহায়তা বাড়ানোরও ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “ওদের কষ্ট আমাদের কষ্ট।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন রেলপথ কাশ্মীরের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বাড়াবে। একই সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বাড়াবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।