বাংলাদেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক অর্জনের পেছনে বিএনপির ভূমিকা ছিল বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
জুলাই-আগস্ট মাসব্যাপী গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় বাকশাল শাসনের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমান অতীতের শত্রুতা ভুলে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং সেই লক্ষ্যেই তিনি অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করে পরিকল্পনা তৈরি করছেন।”
ফখরুল বলেন, “যদি বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে সেই পরিকল্পনাগুলোই বাস্তবায়ন করবে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতে হবে। ধৈর্য ধরুন। জনগণ ভোট দিলে বিএনপিই আবার ক্ষমতায় আসবে। কারণ, বিএনপি হলো জনগণের দল, বিএনপি হলো গণতন্ত্রের প্রতীক।”
বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, “আজ যারা ফ্যাসিবাদ চালাচ্ছে, তারা গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করতে চায়। আমরা জানি তারা আমাদের উস্কানি দিতে চায়, কিন্তু আমরা সেই ফাঁদে পা দেব না।”
তিনি আরও বলেন, “লক্ষাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ৬০ লাখ মিথ্যা মামলা, গুম, হত্যা, নির্যাতন চালিয়েও বিএনপিকে দমন করা যায়নি। বরং বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওপর চালানো নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাবন্দি রাখা হয়েছে, আর তারেক রহমানকে বিদেশে পাঠিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা শহরে রিকশা চালিয়েছে, অটো চালিয়েছে, নাইট গার্ডের কাজ করেছে, কিন্তু রাজপথ ছাড়েনি। এটাই আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস।”
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আজকের ছাত্রদলের প্রত্যেক সদস্য আমাদের সঙ্গে কারাবরণ করেছে। অনেকে গ্রামে থাকতে না পেরে শহরে পেশাজীবী হয়েছে। কিন্তু ১৪২ জন শহীদের কেউ গেজেটেড কর্মকর্তা হতে পারেনি—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
সভায় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সভাপতিত্ব করেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।
তারা সবাই সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।