জাতীয় নির্বাচন দ্রুত আয়োজন করে দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলছি, দয়া করে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ বন্ধ করুন। এটি দেশের জন্য ক্ষতিকর।”
তিনি আরও বলেন, “এক দলকে এগিয়ে দিয়ে অন্য দলকে কোণঠাসা করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হলে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
আব্বাস বলেন, বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সহযোগিতা করছে। “তবুও আমরা আপনাদের বলছি, জাতীয় নির্বাচন দ্রুত আয়োজন করুন। যদি নির্বাচন হয়, দেশের চলমান অস্থিরতা কমে যাবে। আর যদি না হয়, তাহলে মানুষ ভাববে আপনারাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।”
বিএনপি এই কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩৬ দিনব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এটি ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট গণজাগরণের শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক নীরব মিছিলের পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়।
আব্বাস বলেন, “কেউ কেউ বলেছে, বিএনপির নাম এখন গিনেস বুকে লেখা যাবে—একেবারে মুছে যাওয়ার কারণে। আমি বলছি, মুখ সামলান। এই ধরনের উসকানিমূলক কথা বলা দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বিএনপি কারও সঙ্গে বিবাদে যেতে চায় না। বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলার দল নয়। এটি একটি গণতান্ত্রিক দল, জনগণের অধিকার ও ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।”
৫ আগস্টের পর সরকারের কিছু নেতার উক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আব্বাস বলেন, “তারা এত আত্মবিশ্বাস পেল কোথা থেকে? আমরা চাই সবাই শক্তিশালী হোক, কিন্তু মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ছড়াবেন না।”
মিটফোর্ডে এক ভাঙারি ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় তিনি দাবি করেন, নিহত ব্যক্তি যুবদলের কর্মী ছিলেন। “এই ঘটনাকে ব্যবহার করে বিএনপিকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে, যেন একপাক্ষিকভাবে ক্ষমতার পথ পরিষ্কার করা যায়।”
আব্বাস বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া নয়। আমরা ১৭ বছর ধরে রাস্তায় আছি মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। যারা ভাবছেন বিএনপিকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় যাবেন, তারা ভুল করছেন। যতদিন একজন বিএনপি কর্মী বেঁচে থাকবে, ততদিন এই দলকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা জানে কীভাবে রাস্তায় আন্দোলন করতে হয়, আবার জেলেও টিকে থাকতে হয়। “এই ১৭ বছরে আমরা এসব শিখেছি। হুমকি দিয়ে আমাদের দমন করা যাবে না।”
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, “কিছু রাজনৈতিক দল শহীদদের আত্মত্যাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তারা শহীদদের চেতনা বাস্তবায়ন নয়, বরং নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে ব্যস্ত।”
পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক ও মালিবাগ মোড় হয়ে একটি নীরব মিছিল করেন, যা আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
আব্বাসের বক্তব্যে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা, অবিলম্বে নির্বাচন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্যের আহ্বান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।