ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সোমবারের বিমান দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যেই তাঁরা কলেজে যান।
তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন এবং কলেজ চত্বর থেকে বের হতে দেননি। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় সরকার প্রকৃত তথ্য গোপন করছে এবং দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
দিনভর উত্তেজনার পর সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে পুলিশি প্রহরায় উপদেষ্টারা কলেজ ত্যাগ করেন। তাঁদের গাড়ি মাইলস্টোন কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল ডিপো এলাকায় পৌঁছায়।
এর আগে দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে তাঁরা প্রথমবার ক্যাম্পাস ত্যাগের চেষ্টা করেন, তবে দিয়াবাড়ি মোড়ে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা গাড়ি থামিয়ে দেন। এতে উপদেষ্টারা বাধ্য হন আবার কলেজ ভবনে ফিরে যেতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১. নিহতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ
২. আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা
৩. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ
৪. পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান ব্যবহার
৫. বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার
৬. উদ্ধারকাজে শিক্ষক-অভিভাবকদের উপর নির্যাতনের জন্য বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ
দুপুর ১টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিকে ‘সম্পূর্ণ যৌক্তিক’ উল্লেখ করে আশ্বাস দেন, সরকার প্রতিটি বিষয় বিবেচনায় নেবে।
তবুও শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তাঁদের অভিযোগ, সরকার কেবল আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আন্দোলন চলাকালে পুরো কলেজ এলাকা ঘিরে রাখে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
সোমবারের দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান আঘাত হানে। এতে অন্তত ৩১ জন নিহত হন এবং ১৬৫ জন আহত হন, যাঁদের বেশিরভাগই স্কুলশিক্ষার্থী।
উদ্ধার তৎপরতার সময় শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে সামরিক সদস্যদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন, যদিও এর আগেই দিয়াবাড়ি সেনা ক্যাম্প থেকে জনসমাবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। উপদেষ্টারা পৌঁছালে প্রথমে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিকেলে আবারও কলেজ ত্যাগের চেষ্টা করলে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বারের মতো রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বাধা দেন।
সন্ধ্যায় পুলিশি সহায়তায় উপদেষ্টারা কলেজ ত্যাগ করলেও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তাঁরা বলেছেন, এই ঘটনায় যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা থামবেন না।