Wednesday, July 9, 2025
Homeআন্তর্জাতিকমধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন উদ্যোগ: সিরিয়া ও লেবাননকেও আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করার চেষ্টায়...

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন উদ্যোগ: সিরিয়া ও লেবাননকেও আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করার চেষ্টায় ট্রাম্প

গোলান মালভূমি নিয়ে বিরোধ ও হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরালো হচ্ছে

ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শেষ হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা আবারও জোরদার হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “ইরানের ওপর বিজয় আমাদের জন্য শান্তি চুক্তিগুলো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের পথ খুলে দিয়েছে।”

ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে নতুন বিলবোর্ডে লেবানন ও সিরিয়ার রাষ্ট্রপতিদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা যাচ্ছে, যাঁদের চারপাশে লেখা রয়েছে, “আব্রাহাম অ্যালায়েন্স: এটা নতুন মধ্যপ্রাচ্যের সময়।”

২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো এবং সুদানের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করা হয়, যা “আব্রাহাম চুক্তি” নামে পরিচিত।

তবে সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা অপেক্ষাকৃত বেশি জটিল। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক নিল কুইলিয়াম বলেন, “যারা আগে সই করেছিল, তারা কখনোই ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করেনি। কিন্তু সিরিয়া ও লেবানন decades-long দ্বন্দ্বে জড়িত, এবং সেটা এখনো উত্তপ্ত।”

সিরিয়া ও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬৭ সাল থেকে যুদ্ধে রয়েছে, যখন ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে এই ভূখণ্ডকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও জাতিসংঘ এখনো সেটি মানেনি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি শাসক বাসার আল-আসাদকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানান, তিনি ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন না এবং সীমান্তে শান্তি চান।

মার্কিন দূত টম ব্যারাক বলেন, “শারা চান, দুই দেশের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি হোক। তবে তিনি চান, ইসরায়েল ১৯৭৪ সালের চুক্তি মেনে দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে আসুক।”

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার বলেন, “আমরা চাই সিরিয়াও আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হোক, তবে গোলান মালভূমি ইসরায়েলের অধীনেই থাকবে।”

লন্ডনভিত্তিক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক বুরচু ওজচেলিক বলেন, “সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে এমনকি একটি অগ্রহণ না করার চুক্তিও এই অঞ্চলের জন্য বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক মাসে গোপন আলোচনা হয়েছে যাতে সিরিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইরান-সম্পর্কিত সহিংসতা থেকে রক্ষা, এবং তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যায়।”

এদিকে কুইলিয়ামের মতে, লেবাননের রাজনৈতিক অবস্থা এতটাই জটিল যে, দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের ইসরায়েলবিরোধী অভিযানের পর লেবাননের দক্ষিণ থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। আট সপ্তাহের সংঘর্ষে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতের উপকণ্ঠে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এক যুদ্ধবিরতিতে অধিকাংশ হামলা বন্ধ হলেও ইসরায়েল এখনো দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি উচ্চভূমিতে সেনা মোতায়েন রেখেছে। হিজবুল্লাহও অস্ত্র নামাতে নারাজ, ফলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীলই রয়েছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের গবেষক কেলি পেটিলো বলেন, “ট্রাম্প শান্তি চুক্তি করে নোবেল পুরস্কার পেতে চান, তাই তিনি আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছেন।”

তবে তার মতে, “ইসরায়েলের চরমপন্থী অবস্থানের ওপর কেউ নিয়ন্ত্রণ রাখছে না, ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। আর ট্রাম্পের কূটনৈতিক দক্ষতাও সীমিত।”

নিল কুইলিয়াম বলেন, “ট্রাম্প একজন শান্তিকামী নেতা নন। তিনি শুধুমাত্র কৌশলগত ভাবে চিত্র পরিবর্তন করতে চান, বাস্তব শান্তির জন্য নয়।”

মধ্যপ্রাচ্যে নতুনভাবে শান্তির সম্ভাবনা তৈরি হলেও বাস্তবতা বলছে, রাজনৈতিক স্বার্থ, দখলদারিত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখনও বড় বাধা হয়ে আছে। তবুও, কূটনৈতিক আলোচনার জানালা খোলা থাকলে আশার আলো নেভে না।

RELATED NEWS

Latest News