টানা ভারী বৃষ্টিপাতে মেক্সিকো জুড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বন্যায় অন্তত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
শনিবার মেক্সিকোর নাগরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের ৩২টির মধ্যে ৩১ রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে নদী উপচে পড়েছে, বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পাহাড়ধসে রাস্তা ও সেতু ভেঙে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজ্য হিদালগো। সেখানে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, এক হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৯০টি এলাকা এখনো উদ্ধারকর্মীদের নাগালের বাইরে আছে বলে জানিয়েছে ফেডারেল নিরাপত্তা বিভাগ।
পার্শ্ববর্তী পুয়েবলা রাজ্যে অন্তত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্য সরকারের হিসাবে, পুয়েবলায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় ভেরাক্রুজ রাজ্যে আরও পাঁচজন এবং কেন্দ্রীয় কেরেতারো রাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম শনিবার এক্স-এ লিখেছেন, “আমরা জনগণের পাশে আছি, সড়কগুলো খুলে দেওয়ার কাজ চলছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপনে কাজ চলছে।”
তিনি জানান, উদ্ধার অভিযানে নৌকা, বিমান ও হেলিকপ্টারসহ হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্য ও ত্রাণ বিতরণে ৫ হাজার ৪০০ সেনা অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিয়েরা মাদ্রে ওরিয়েন্টাল পাহাড়ি অঞ্চলে, যা মেক্সিকো উপসাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত। ছোট ছোট বহু জনপদ এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। হিদালগোর তুলানসিঙ্গো শহরে এএফপি’র প্রতিবেদক জানান, পাহাড়ধসে শহরের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
২০২৫ সালে দেশজুড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী মেক্সিকো সিটিতেও নতুন বৃষ্টির রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ইসিদ্রো কানো জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণ মৌসুমি পরিবর্তন ও মেক্সিকো উপসাগর থেকে উঠে আসা উষ্ণ, আর্দ্র বাতাস। উত্তর দিক থেকে নেমে আসা শীতল বায়ুও বৃষ্টির পরিমাণ বাড়িয়েছে।
এদিকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে ক্রান্তীয় ঝড় রেমন্ড ও প্রাক্তন ঘূর্ণিঝড় প্রিসিলা নজরদারিতে আছে। এসব ঝড়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় চিয়াপাস, গুয়েরেরো, ওয়াক্সাকা ও মিচোয়াকান রাজ্যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ঝড় রেমন্ড সপ্তাহান্তে দক্ষিণ বাজা ক্যালিফোর্না উপকূলে আঘাত হানতে পারে, যদিও রোববার নাগাদ এটি দুর্বল হয়ে ক্রান্তীয় নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।