বাংলা ও অসমের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে ভাষা ও অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হয়েছে। একে অপরকে বিভাজনের রাজনীতি ও তোষণের অভিযোগে তুলোধোনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
শনিবার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “অসমে বিজেপির বিভাজনমূলক এজেন্ডা সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অসমের জনগণ এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি প্রত্যেক সাহসী নাগরিকের পাশে আছি, যারা তাঁদের ভাষা, পরিচয় এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় লড়ছেন।”
তাঁর এই মন্তব্য আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বক্তব্যের পরদিন, যেখানে মোদি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়ে একটি ‘ইকোসিস্টেম’ তৈরি করেছে। এর জবাবে তৃণমূল জানায়, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের মিথ্যা অনুপ্রবেশকারীর তকমা দেওয়া হচ্ছে।
মমতা আরও বলেন, “বাংলা দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। অসমেও এটি দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষায় প্রতিবাদ করলেই যদি নাগরিকদের হুমকি দেওয়া হয়, তবে তা অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক।”
বুধবার কলকাতায় এক বিরাট মিছিলে নেতৃত্ব দেন মমতা, যেখানে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ীদের আটকানোর প্রতিবাদ জানানো হয়।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা জবাব দেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, “অসমের মানুষ নিজের পরিচয় রক্ষায় লড়ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিচ্ছে, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভোটব্যাংক রক্ষায় তোষণ করছে এবং সীমান্ত অনুপ্রবেশ নিয়ে নীরব রয়েছে।”
তিনি আরও লেখেন, “দিদি, মনে করিয়ে দিই—আমরা আমাদের নিজস্ব মানুষদের বিরুদ্ধে নয়, বরং সীমান্ত পেরিয়ে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে লড়ছি, যা ইতিমধ্যেই আমাদের জনসংখ্যার ভারসাম্যে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। কয়েকটি জেলায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন।”
১৪ জুলাই কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা থানায় হিমন্তর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল, যেখানে বলা হয়েছে তিনি অসমে বাংলা ভাষাভাষীদের লক্ষ্যবস্তু করছেন।
জবাবে হিমন্ত লেখেন, “আমরা ভাষা বা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভাজন করি না। অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো, হিন্দি—সব ভাষা ও সম্প্রদায় এখানে সহাবস্থান করছে। তবে কোনও সভ্যতা বেঁচে থাকতে পারে না, যদি সে নিজের সীমান্ত ও সংস্কৃতি রক্ষা না করে।”
এই বাকযুদ্ধ ভাষা, পরিচয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধকে আরও তীব্র করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হতে পারে।