শুক্রবার সকালে অনুভূত ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। ৫.৭ মাত্রার এই কম্পনকে দেশে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে বহু দশকে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, এর আগে সিলেট ও নোয়াখালীর মতো অঞ্চলে কেন্দ্রস্থ হওয়া ভূমিকম্পের নজির থাকলেও ঢাকার এত কাছে এমন মাত্রার কেন্দ্র আগে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারি জানান, বাংলাদেশ পাঁচটি টেকটনিক সোর্স জোনের ওপর অবস্থান করছে। এগুলোর মধ্যে নোয়াখালী থেকে কক্সবাজার, নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং সিলেট থেকে ভারতের দিকে বিস্তৃত কয়েকটি ফল্ট প্রধান। নরসিংদী নোয়াখালী ও সিলেটের মধ্যবর্তী প্রধান ফল্টের একটি ক্ষুদ্র শাখার ওপর পড়ে, ফলে মাধবদীতে কেন্দ্র পাওয়া অস্বাভাবিক হলেও অসম্ভব নয়।
তিনি সতর্ক করে বলেন, সাম্প্রতিক কম্পনটি বড় ভূমিকম্পের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে সাধারণত একাধিক ছোট কম্পন দেখা যায়, তাই এই ঘটনাকে প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ইতিহাসভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী কোনো অঞ্চলে সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ বছর পরপর বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশের আশপাশে সর্বশেষ বড় কম্পন প্রায় এক শতাব্দী আগে হয়েছে এবং গত দেড়শ বছরে মাঝারি মাত্রার প্রায় পাঁচটি কম্পন রেকর্ড হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অদূর ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে তিনি মনে করেন।
বিশেষজ্ঞরা নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভবন নিরাপত্তা পর্যালোচনা, জরুরি সাড়া পরিকল্পনা হালনাগাদ, পরিবার ও কর্মস্থলে ড্রিল অনুশীলন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও ভূপৃষ্ঠীয় ও কাঠামোগত ঝুঁকি মূল্যায়ন, হাসপাতাল ও জরুরি স্থাপনাগুলোর সক্ষমতা যাচাই এবং জনসচেতনতা জোরদারের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
