ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে পৌঁছেছেন। এই সফরে রাজকীয় সংবর্ধনার পাশাপাশি আলোচনা হচ্ছে অভিবাসন সংকট এবং ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে।
ব্রেক্সিটের পর এটাই কোনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম ব্রিটেন সফর। এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি কূটনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
লন্ডনের রয়্যাল এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানান প্রিন্স উইলিয়াম ও ক্যাথরিন। পরে রাজকীয় রীতিতে ঘোড়ার গাড়িতে করে তাঁদের উইন্ডসর ক্যাসেলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ইউনিয়ন জ্যাক ও ফরাসি পতাকায় সুসজ্জিত ছিল পুরো পথ।
উইন্ডসরে রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলার আয়োজনে একটি রাজকীয় নৈশভোজে অংশ নেন তারা। এতে রাজা চার্লস রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও বিশ্বব্যাপী জটিল হুমকি মোকাবিলায় ব্রিটেন-ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগের কথা বলেন।
বুধবার ম্যাক্রোঁ ব্রিটিশ সংসদের উভয় কক্ষকে উদ্দেশ করে বক্তব্য রাখবেন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে অভিবাসন, প্রতিরক্ষা এবং বিনিয়োগ।
বিশেষ করে ইংলিশ চ্যানেল হয়ে ছোট নৌকায় ব্রিটেনে অনুপ্রবেশ ঠেকানোই আলোচনার মূল বিষয়। ২০২৪ সালে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেন, যা ২০২২ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা।
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই ২০ হাজারের বেশি মানুষ এই পথে ব্রিটেনে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। অনেকে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
ব্রিটেন ও ফ্রান্স একাধিক চুক্তি করেও পাচার চক্র ঠেকাতে সফল হতে পারেনি। তবে স্টারমারের সরকার এবারে নতুন কৌশলে কাজ করতে চায়।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার জানান, ফরাসি পুলিশ নতুন কৌশল নিয়েছে, নৌকায় থাকা অবস্থায়ই তা ধ্বংস করা হচ্ছে। যদিও অধিকারকর্মী ও পুলিশ ইউনিয়ন এই পদ্ধতিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছে।
স্টারমার ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের পক্ষেও কাজ করছেন। ফ্রান্স ও ব্রিটেন এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো এতে আগ্রহ দেখাননি।
বৃহস্পতিবার ম্যাক্রোঁ ও স্টারমার একটি আন্তর্জাতিক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেবেন, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে।
স্টারমার সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন এবং সামরিক পরিকল্পনায় অগ্রগতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ম্যাক্রোঁর এই সফর কেবল কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংলাপ, নিরাপত্তা ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় ঐক্যের বার্তা বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।