১৯৩৭ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে ইউক্রেনীয় পরিচালক সের্গেই লোজনিতসার নতুন ছবি ‘টু প্রসিকিউটরস’। ছবিটি স্টালিনের মহাশুদ্ধি অভিযানের সময়ের এক তরুণ প্রসিকিউটরকে ঘিরে, যিনি শুরুতে পার্টির প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্মমতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন।
চলচ্চিত্রটি প্রথম প্রদর্শিত হয় কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবং এখন চলছে ৫৯তম কার্লোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ছবিটির মূল উপজীব্য এক ধরনের নিঃশব্দ আতঙ্ক এবং রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবিক চেতনার লড়াই।
পরিচালক লোজনিতসা জানান, “আমি একই উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করা এই গল্পের ধারাবাহিকতা নিয়ে কাজ করতে চাই। পরবর্তী ছবিতে আমি দেখাতে চাই নির্যাতিতদের দিক থেকে পরিস্থিতি কেমন ছিল। তারা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিত, কীভাবে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হতো।”
তিনি জানান, নির্দোষ মানুষদের ‘জাপানি গুপ্তচর’, ‘বিপ্লব পরিকল্পনাকারী’ ইত্যাদি বলে স্বীকারোক্তি আদায় করা হতো। “এমন একটি স্বীকারোক্তিও ছিল যেখানে বলা হয়েছিল লন্ডন থেকে বোম্বে পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল — এটি আদতে একটি সত্যিকারের স্বীকারোক্তিপত্র ছিল, যা সই করানো হয়েছিল,” বলেন লোজনিতসা।
পরিচালক তার ভবিষ্যৎ ছবির জন্য ‘দ্য অরেঞ্জ ল্যাম্পশেড’ নামটি বিবেচনায় রেখেছেন, যা সোভিয়েত সময়ের একটি প্রতীকী উপকরণের প্রতি ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “কেন এই নাম তা সিনেমা দেখলেই বোঝা যাবে।”
টু প্রসিকিউটরস বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাবে বলে জানানো হয়েছে। উত্তর আমেরিকার জন্য ছবিটির পরিবেশনা অধিকার পেয়েছে Janus Films। যদিও এখনও নির্দিষ্ট মুক্তির তারিখ জানানো হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে লোজনিতসা বলেন, “আমার মনে হয় তারা বুঝতে পারবে এই ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিচ্ছবি — এমন এক সময়ের যাত্রা যেখানে স্বৈরশাসনের ছায়া আবার ফিরে আসছে।”
তিনি যোগ করেন, “এই গল্পটি ১৯৩০-এর দশকে হলেও, আজকের পৃথিবীতে অনেক কিছুই বদলায়নি। মানুষের আচরণও বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।”
লোজনিতসার চলচ্চিত্রে অতীতের নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গল্প যেমন উঠে এসেছে, তেমনি সমসাময়িক বাস্তবতার সঙ্গেও তৈরি হয়েছে এক ধরনের সাদৃশ্য। চলচ্চিত্রটি ইতিহাস এবং বর্তমানের মধ্যবর্তী দিকবদলের আয়না হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করছে।