যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ফিলিস্তিন অ্যাকশন সমর্থনে আয়োজিত এক বিক্ষোভে অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। গত মাসে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
শনিবার পার্লামেন্ট স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে আয়োজকরা দাবি করেন, শত শত অংশগ্রহণকারীর মধ্যে কেবল একটি অংশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশ এ দাবি নাকচ করে জানায়, যারা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন অ্যাকশন সমর্থন করে প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন তাদের সবাইকেই গ্রেপ্তার বা গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে।
গত জুলাইয়ের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করে। এর আগে সংগঠনের কয়েকজন কর্মী দক্ষিণ ইংল্যান্ডের একটি বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করেন, যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ পাউন্ড বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংগঠনের সদস্যরা সহিংসতা, গুরুতর আঘাত এবং বড় ধরনের সম্পত্তি বিনষ্টের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও গ্রিনপিসসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এ সিদ্ধান্তকে স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ এবং আইনের অপব্যবহার বলে সমালোচনা করেছে।
শনিবারের বিক্ষোভ আয়োজন করে ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবি, নজিরবিহীন সংখ্যক মানুষ গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ডের ঝুঁকি নিয়েছেন দেশের প্রাচীন স্বাধীনতা রক্ষায়। তারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে নতুন কর্মসূচিতে আরও বেশি মানুষ যোগ দেবেন।
দুপুর থেকে পার্লামেন্টের সামনে জমায়েত হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। কারও হাতে ছিল ‘গণহত্যা রুখুন, ফিলিস্তিন অ্যাকশনকে সমর্থন করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড, আবার অনেকে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়েছেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মনোবিদ ক্রেইগ বেল (৩৯) বলেন, নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তার মতে, ফিলিস্তিন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা বাস্তব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনায় হাস্যকর। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী রিচার্ড বুল (৪২) বলেন, “সরকার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমি কোনো অপরাধ করিনি।”
৫ জুলাই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অনুরূপ বিক্ষোভে বহু গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশটির আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনকে সমর্থন করা বা সদস্য হওয়া অপরাধ এবং এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড। স্কটল্যান্ডে এ পর্যন্ত সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আলাদা আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধানের কাছে চিঠি দিয়ে প্ল্যাকার্ড বহনকারী শান্তিপূর্ণ সমর্থকদের ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, এ ধরনের গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।
এ বিষয়ে আদালতে একটি চ্যালেঞ্জ মামলার শুনানি চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।