বুধবার সন্ধ্যা, সূর্যাস্তের কিছু পরেই ঢাকার পুরান এলাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেট নাম্বার ৩ এর কাছে ঘটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা।
প্রায় শতাধিক পথচারীর সামনে স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)–কে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, পিটিয়ে ও পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার মৃতদেহকেও নির্যাতন করা হয়।
পুরো হত্যাকাণ্ড সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে কয়েকজন মিলে সোহাগকে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে তাকে মাটিতে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। এরপর দুই যুবক তার নিথর দেহ টেনে রাস্তায় এনে লাথি, ঘুষি ও পাথর ছুড়ে তার মাথা ও শরীরে আঘাত করতে থাকে।
এ সময় আশেপাশে বহু মানুষ থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরাও নীরব ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাননি।
সোহাগের পরিবার দাবি করেছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ তার ব্যবসা দখলের চেষ্টায় নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সোহাগ পুরান ঢাকায় পুরাতন বৈদ্যুতিক তার ও স্ক্র্যাপ সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ওই এলাকার একটি স্ক্র্যাপ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
মাহমুদুল হাসান মোহিন ও সরওয়ার হোসেন টিটু এই সিন্ডিকেটে প্রবেশ করতে চাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। এই বিরোধ থেকেই হত্যার সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় নিহতের বড় বোন একটি মামলা করেন। মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন মাহমুদুল হাসান মোহিন, সরওয়ার হোসেন টিটু, মনি, নান্নু, রিয়াদ, টিটন গাজী ও লাকী।
র্যাব ও পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং একজনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, “ভিডিওটি দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। এ ধরনের নৃশংসতা সমাজের জন্য ভয়ংকর বার্তা বহন করে। আমরা ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি এবং বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।”
পরিবার জানায়, ঘটনার সকালে টিটু সোহাগের বাসায় গিয়ে একসঙ্গে খাবার খান এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার কথা বলে তাকে বাইরে নিয়ে যান। এরপরই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এই হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা বলেন, প্রকাশ্যে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড যদি বিচার না পায়, তাহলে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে।
তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।