ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ড ঘিরে সারা দেশে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। রক্তমাখা কংক্রিটের টুকরো পড়ে থাকা স্থানে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন, আর দোকানপাটের মালিকেরা এড়িয়ে চলছেন সাংবাদিকদের।
রবিবার ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের গেট নম্বর ৩–এর পাশে উৎসুক জনতা ও সাংবাদিকদের ভিড়। তবে কেউই বিস্তারিত বলতে রাজি নন। আশপাশের দোকানদারদের অনেকেই বলেছেন, তারা ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না, কিছু দেখেনওনি।
তবে পোস্টোগোলার আজিম বলেন, “ফেসবুকে ভিডিও দেখে এসেছি। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে ঘটবে আর কেউ বাধা দেবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হয়। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত, না হলে এরকম ঘটনা চলতেই থাকবে।”
জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল সন্ত্রাসী মিটফোর্ড হাসপাতালের গেট নম্বর ৩–এর সামনে সোহাগকে আক্রমণ করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও কংক্রিটের টুকরো দিয়ে আঘাত করে তাকে গেটের ভেতর থেকে টেনে বাইরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরে নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রবিবার ভোররাতে নেত্রকোনায় অভিযান চালিয়ে ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি দল দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সাজিব বেপারী (২৭) ও মো. রাজিব বেপারী (২৫)। তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে মামলার মোট গ্রেপ্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতজনে।
পুলিশ ও র্যাব আগেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তদন্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, “এটি একটি জটিল ও স্পর্শকাতর মামলা। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় তদন্ত চলছে। বাকিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বলেন, “যাতে দেশে আর কেউ এমন নৃশংসতা ঘটাতে সাহস না পায়, সে জন্য সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।”
ঘটনার নৃশংসতা, ভিডিও ফুটেজের ভাইরাল হওয়া, এবং এলাকাবাসীর নীরবতা–সব মিলিয়ে লাল চাঁদ হত্যা মামলাটি এখন দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। পুলিশের তদন্ত অগ্রগতি ও বিচার নিয়ে জনগণের কৌতূহল ও প্রত্যাশা তুঙ্গে।