ইরাকের পূর্বাঞ্চলীয় কুত শহরের কর্নিশ হাইপারমার্কেট নামের একটি নতুন উদ্বোধিত শপিং মলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৬৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন। বৃহস্পতিবার এই খবর নিশ্চিত করে স্থানীয় প্রশাসন।
বুধবার রাতে প্রথম তলার কোনো এক কোণ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুহূর্তেই আগুন পুরো পাঁচতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দোকান ও রেস্টুরেন্টে কেনাকাটা ও খাবার খেতে গিয়েছিলেন। অনেকে বাথরুমে আটকে পড়ে দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারান।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দ্বিতীয় তলায় একটি এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণের পরেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের ছাদে শিশু সহ বহু মানুষ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী আলি কাধিম জানান, তার চাচাতো ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও তিন সন্তান নিখোঁজ। তিনি হাসপাতাল ও মলের ধ্বংসাবশেষের পাশে দাঁড়িয়ে অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে ৬১ জন নাগরিক মারা গেছেন, যাদের অধিকাংশই বাথরুমে দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪টি দেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।”
আইএনএ সংবাদ সংস্থাকে এক চিকিৎসা সূত্র জানায়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ জনে এবং আহত হয়েছেন ৪০ জন। ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনো উদ্ধার কাজ চলছে।
স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন হতাহতদের স্বজনরা। ফরেনসিক বিভাগে একে একে নিয়ে আসা হচ্ছে পুড়ে যাওয়া মরদেহ। কেউ কেউ সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কেউ চিৎকার করে বুক চাপড়াচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসক নাসির আল-কুরাইশি বলেন, “আমরা পাঁচজন স্বজনকে হারিয়েছি। আমরা শুধু ডিনার করতে মলে গিয়েছিলাম, লোডশেডিং এড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জীবনটাই শেষ হয়ে গেল।”
মোয়াতাজ কারিম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার তিন স্বজন নিখোঁজ। পরে তিনি দুজনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ শনাক্ত করেন। তাদের একজন মাত্র তিনদিন আগে কাজ শুরু করেছিলেন ঐ শপিং মলে।
তিনি বলেন, “এই ভবনে কোনো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। এটা বড় ব্যর্থতা।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রেস্টুরেন্ট ও সুপারমার্কেট সমন্বিত এই ভবন থেকে ৪৫ জনকে উদ্ধার করেছে সিভিল ডিফেন্স টিম। ভোর ৪টা পর্যন্ত চলেছে উদ্ধার ও চিকিৎসা কাজ।
ওয়াসিত প্রদেশের গভর্নর মোহাম্মদ আল-মিয়াহি তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন এবং জানিয়েছেন, মালিক ও কন্ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। তিনি বলেন, “এই ট্র্যাজেডি একটি বড় সতর্কতা। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পূর্ণ পর্যালোচনা প্রয়োজন।”
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সকল ত্রুটি খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শিয়া ইসলামের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলি সিস্তানি নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইরাকে গত কয়েক বছরে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান এবং ২০২১ সালে কোভিড ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৬০ জনের বেশি।
দেশটির পুরনো অবকাঠামো এবং শিথিল নিরাপত্তা বিধান এসব দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।