খুলনা শহর এবং আশেপাশের এলাকায় বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পানির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার ফলে পানি সংকট মোকাবিলায় সরকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সিওয়্যারেজ অথরিটির (KWASA) মাধ্যমে খুলনা ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প (ফেজ-২) বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২,৫৯৮.৫৯ কোটি টাকা, যা জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০ পর্যন্ত পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ১,৮২১.৮১ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ এবং ৭৭৬.৭৮ কোটি টাকা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) থেকে অনুদান হিসেবে আসবে।
প্রকল্পের লক্ষ্য খুলনা শহরের ১৭.৮ লাখ বাসিন্দাকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সম্প্রসারণ করা এবং শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ত জল উৎসে নির্ভরতা কমানো। প্রকল্পে স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, SCADA সিস্টেম সম্প্রসারণ, নন-রেভিনিউ ওয়াটার হ্রাস এবং কৃত্রিম পুনঃচার্জ ও ভূগর্ভস্থ জল ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া লবনাক্ত জল সমস্যার প্রভাব কমাতে নতুন বিতরণ পাইপলাইন ৩০০ কিলোমিটার নির্মাণ, ৬৩ মিটার করা এলাকার বিদ্যমান নেটওয়ার্ক আপগ্রেড, নতুন প্রোডাকশন ওয়েল, পাম্পিং স্টেশন, এবং রিজার্ভয়ারের নির্মাণসহ সামানতোশেনা এবং আফিলগেটে উন্নয়ন করা হবে। সামানতোশেনা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ক্ষমতা ১১০ মিলিয়ন লিটার থেকে ১৩৫ মিলিয়ন লিটার প্রতিদিন বৃদ্ধি করা হবে।
পানি সরবরাহের জন্য একটি ৩৮ কিলোমিটার ক্লিয়ার ওয়াটার ট্রান্সমিশন মেইন এবং ১২.৫ কিলোমিটার রাউ ওয়াটার লাইন নির্মাণ, ৩৮৫,০০০ ঘন মিটার ইম্পাউন্ডিং রিজার্ভয়ারের নির্মাণ এবং আফিলগেট ও মোস্তফা মোরের আপগ্রেড অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পে সোলার পাওয়ার সিস্টেম বসিয়ে পানি সরবরাহ স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে।
বর্তমানে খুলনা শহর আংশিকভাবে ভূগর্ভস্থ এবং আংশিকভাবে পৃষ্ঠতল জলের উপর নির্ভরশীল। এপ্রিল-মে মাসে মূল জল উৎস মধুমতী নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়, যা ৬০০ মিলিগ্রাম/লিটার থেকে ২,৬০০ মিলিগ্রাম/লিটারে পৌঁছাতে পারে।
প্রকল্পের মাধ্যমে বর্ষার বাইরে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, ভূগর্ভস্থ জলের ওপর নির্ভরতা কমানো, জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব জল ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
খুলনার কৃষক ও স্থানীয় জনগণ শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে পানির ঘাটতি, কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং জীবিকা সংকটে পড়েছেন। অনেক কৃষক লবণ সহনশীল ফসল চাষে পরিবর্তন করেছেন, তবে উৎপাদন কম থাকায় পরিবারগুলোর আয় ও খাদ্য নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।