Tuesday, October 21, 2025
Homeজাতীয়খুলনায় ফুলের ব্যবসায় নতুন সম্ভাবনা: বদলে যাচ্ছে জীবিকা ও নগর সংস্কৃতি

খুলনায় ফুলের ব্যবসায় নতুন সম্ভাবনা: বদলে যাচ্ছে জীবিকা ও নগর সংস্কৃতি

মধ্যবিত্তের ক্রমবর্ধমান রুচি ও চাহিদায় ফুলের বাজারে বিকাশ, শতাধিক মানুষ জীবিকা খুঁজে পেয়েছেন

খুলনা শহরে গত এক দশকে ফুলের চাহিদা বেড়েছে দ্রুত। পরিবর্তিত রুচি ও মধ্যবিত্তের ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতার ফলে ফুল এখন শুধু সৌন্দর্যের উপকরণ নয়, অনেকের জীবিকার উৎসও হয়ে উঠেছে।

শহরের সদর থানার ফরাজিপাড়া রোডের ফুলবাজারে এখন প্রায় ১২৫ জনের জীবিকা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রঙিন ফুলের মতোই দোকানগুলোর নামও আকর্ষণীয়—দোলনচাঁপা, ফুলেশ্বরী, গোলাপ কানন, রাজনীগন্ধা, ইরানি গোলাপ, পুষ্পমালা, ফুলের বাসর, রোজ গার্ডেন, করবী পুষ্পালয়, বেলি গার্ডেন, স্বর্ণচাঁপা, বিয়ের ফুল, স্বপ্নের ঠিকানা, ফুলের মেলা, নাইট কুইন, মালঞ্চা, পুষ্পকাননসহ আরও অনেক।

বাজার সূত্রে জানা গেছে, এসব দোকানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মৌসুমি ও সারা বছরের ফুল পাওয়া যায়—গ্লাডিওলাস, গোলাপ, গাঁদা, রাজনীগন্ধা, পদ্ম, কদম, গন্ধরাজ, বেলি, রজনীগন্ধা, জুঁই, ডালিয়া, সূর্যমুখী, রঙ্গন, চন্দ্রমল্লিকা, কাঠগোলাপ, টগর, নরসিংহ, কসমসসহ নানা প্রজাতির ফুল।

ফুলের মূল উৎপাদন কেন্দ্র যশোরের গদখালী। এছাড়া সাভার, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতেও ফুল চাষ হচ্ছে। যশোরের পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভোরে ট্রাক ও বাসে ফুল নিয়ে আসেন খুলনার বাজারে।

যশোরের গদখালী গ্রামের ফুলচাষি আব্দুর রহিম বলেন, “আমরা সারা বছর প্রায় ৬০ প্রজাতির ফুল চাষ করি। কেবল এক মাসের কুয়াশার সময় বাদে ফুলের মৌসুম চলে অবিরাম।”

খুলনা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ হাওলাদার বলেন, “সঠিক ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো পেলে এই শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা আছে। সরকারি সহায়তা পেলে কৃষকেরা আরও ভালো মানের ফুল উৎপাদন করতে পারবেন।”

বছরজুড়ে ফুল বিক্রি হলেও সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মৌসুম থাকে সবচেয়ে জমজমাট। বিয়ে, পার্টি, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ভালোবাসা দিবস ও বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে ফুলের বিক্রি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এসব সময়ে ব্যবসায়ীরা জানান, মুনাফা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। দোকানগুলো ফুলের সঙ্গে সজ্জাসামগ্রী, স্টাইরোফোম সাইনবোর্ড, পুষ্পমুকুট ও দেবদারু ও মহগনি পাতার মালাও বিক্রি করে।

রাজনীগন্ধা দোকানের মালিক মহতাব উদ্দিন বাবু বলেন, “আমার দোকানে পাশের উপজেলা—দুমুরিয়া, রূপসা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও পাইকগাছা থেকেও ক্রেতারা আসেন। প্রতিদিন স্থানীয় ও হাইব্রিড ফুল বিক্রি করে গড়ে এক হাজার টাকা লাভ হয়।”

ফুল ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান (৪৫) বলেন, “আমি এরশাদের সময় থেকে ফুলের মালা বানাচ্ছি। শুরুতে রাস্তার পাশে জুঁইয়ের মালা বিক্রি করতাম। এখন নিজেই দোকান চালাই, অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।”

খুলনার এই ফুল ব্যবসা এখন শুধু পেশা নয়, শহরের সংস্কৃতির অংশে পরিণত হচ্ছে।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • খুলনা

RELATED NEWS

Latest News