Friday, July 18, 2025
Homeআন্তর্জাতিকবিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে দগ্ধ টাকার ঘটনায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন

বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে দগ্ধ টাকার ঘটনায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন

আসন্ন সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে অভিশংসন ঠেকাতে প্রতিবেদন বাতিলের অনুরোধ জানালেন বিচারপতি বর্মা

দিল্লিতে সরকারি বাসভবনে দগ্ধ টাকা উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচিত বিচারপতি যশবন্ত বর্মা বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেছেন। তিনি একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাতিলের আবেদন করেন, যেখানে তার “আড়াল থেকে বা সরাসরি অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণ” থাকার বিষয়ে “প্রবল প্রমাণ” উল্লেখ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে, ৮ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার সংসদে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করার সুপারিশও চ্যালেঞ্জ করেছেন বিচারপতি বর্মা। তার মতে, প্রতিবেদনটি “অবৈধ ও একপাক্ষিক” এবং এতে একজন সাংবিধানিক পদাধিকারীর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

এই আবেদন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে বর্ষাকালীন সংসদ অধিবেশন, যেখানে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার।

সূত্র মতে, তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বিচারপতি বর্মাকে পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায্য শুনানির সুযোগ না দিয়েই নেতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। তদন্তে ১৪ মার্চ ঘটনাস্থলে উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থের প্রকৃত তথ্য যাচাই না করার অভিযোগও রয়েছে।

বিচারপতি বর্মা তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তার বাসভবনের আউটহাউজ থেকে কিছু অর্থ উদ্ধার হলেও, মালিকানা, সত্যতা ও অন্যান্য তথ্য নির্ধারণে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন ছিল। অথচ, তদন্ত কমিটি দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্তে পৌঁছে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেননি।

প্রসঙ্গত, এই কমিটি গঠিত হয় ২২ মার্চ, প্রধান বিচারপতি খন্নার নির্দেশে। এতে সদস্য ছিলেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জি এস সন্ধাওয়ালিয়া এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি অনু শিবারমন।

বিচারপতি বর্মা দাবি করেছেন, তদন্তে অভিযোগকারীকেই তার নির্দোষিতা প্রমাণের দায় দেওয়া হয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। কমিটি আগে থেকেই নির্ধারিত সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

এর আগে, ৬ মে তারিখে একটি চিঠিতে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ বা স্বেচ্ছা অবসর নেওয়ার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বিচারপতি বর্মা। তিনি এটিকে “ন্যায়বিচারের পরিপন্থী” প্রক্রিয়া বলে আখ্যা দেন।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ১৪ মার্চ, যখন তার বাসভবনের আউটহাউজে আগুন লাগে এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা স্যাকে ভর্তি পুড়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার করেন। এরপর বিষয়টি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিতে আনেন দিল্লি হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি।

কমিটি ৩ মে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের প্রমাণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

৮ মে সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতি বর্মা ঘটনার দায় অস্বীকার করে একে “ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন। তার বিচারিক দায়িত্ব স্থগিত করা হয় এবং তাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করা হয়।

কমিটির ৬৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, সরাসরি প্রমাণ না থাকলেও “প্রবল প্রমাণের ভিত্তিতে” বিচারপতির অর্থের উপর নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রতীয়মান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, “একজন বিচারপতির বিশ্বাসযোগ্যতা জনগণের আস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ক্ষেত্রে বিচারপতির আচরণ সেই আস্থাকে খাটো করেছে।”

এতে আরও বলা হয়, স্টোররুমে নগদ অর্থের উপস্থিতি প্রমাণিত হওয়ার পর, তার দায়িত্ব ছিল যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার। কিন্তু তিনি শুধু অস্বীকার করেছেন এবং একে ষড়যন্ত্র বলেছেন।

কমিটির মতে, অর্থ লুকানোর বিষয়ে বিচারপতি বা তার পরিবারের সরাসরি জড়িত থাকা থাকুক বা না থাকুক, এটি একটি সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তির জন্য গুরুতর অসদাচরণ।

এ ঘটনার রাজনৈতিক মাত্রাও রয়েছে। সম্প্রতি সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানান, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলোর সমর্থন চাইবে সরকার। আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এ প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, বিরোধী INDIA জোট বিচারপতি শেখর কুমার যাদবের বিরুদ্ধেও পুরনো অভিশংসন প্রস্তাব আবার তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর, ৫৫ জন সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অনুষ্ঠানে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ায় অভিশংসনের নোটিশ জমা দিয়েছিলেন।

তবে মার্চে রাজ্যসভার সচিবালয় বিষয়টি তাদের একক এখতিয়ার বলে জানালে সুপ্রিম কোর্ট প্রস্তাবিত তদন্ত থেকে সরে আসে। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

রাজ্যসভার সদস্য কপিল সিব্বল, জয়রাম রমেশ এবং সাকেত গোখলে অভিযোগ করেছেন, বিচারপতি যাদবের বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের অবস্থান ও আসন্ন সংসদ অধিবেশনেই প্রকাশ পাবে বিচারপতি বর্মা বিতর্কের পরবর্তী ধাপ।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ভারত

RELATED NEWS

Latest News