Thursday, July 3, 2025
Homeজাতীয়'জুলাই উদ্ভব': কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের ডাক

‘জুলাই উদ্ভব’: কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের ডাক

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এক বছরে রূপ নেয় গণজাগরণে, ন্যায়বিচার ও সমানাধিকারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার ঐক্য

ঠিক এক বছর আগে আজকের এই দিনে কেবল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়েছিল এক ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু সময় গড়াতেই সেই আন্দোলন রূপ নেয় একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের আন্দোলনে—যা আজ পরিচিত ‘জুলাই উদ্ভব’ নামে।

আন্দোলনের সূচনা ঘটে হাইকোর্টের এক রায়ের পর, যেখানে ২০১৮ সালে জারি করা কোটা বিলুপ্তির সরকারী প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে পুনরায় ৫৬ শতাংশ কোটা চালু হয়, যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনুন্নত এলাকার জন্য ১০ শতাংশ, সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।

এই কোটা পদ্ধতিকে মেধাবিরোধী ও বৈষম্যমূলক বলে মনে করে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ৫ জুন প্রথম প্রতিবাদে নামে। এরপর ১ জুলাই থেকে শুরু হয় সারাদেশব্যাপী সমন্বিত আন্দোলন, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

ঢাবির রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ চলতে থাকে। ঢাকার আরিচা মহাসড়কও সাময়িকভাবে অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। ২ জুলাই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বিক্ষোভ হয়, ৩ ও ৪ জুলাই চলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ।

আন্দোলনকারীদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে ছিল:

  • একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে কোটা সংস্কার করা,

  • কোটায় শূন্যপদ পূরণ না হলে তা মেধার ভিত্তিতে পূরণ,

  • একই ব্যক্তি যেন একাধিকবার কোটা সুবিধা না পায়,

  • নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৬ বছরের শাসন শেষ করে ক্ষমতাচ্যুত হয় তৎকালীন সরকার। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে চলা এই আন্দোলন শুধু কোটার সীমায় আটকে থাকেনি, এটি হয়ে উঠেছিল সামাজিক ন্যায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক লড়াই।

জুলাই আন্দোলন প্রমাণ করেছে—একটি জাতির পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন জনতার ঐক্য ও ছাত্র সমাজের সাহসী উচ্চারণ। রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারে এই আন্দোলন ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেল দৃঢ় এক বার্তা।

RELATED NEWS

Latest News