Saturday, August 9, 2025
Homeজাতীয়জুলাই আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মৃতিরা: পরিবারদের বেদনা ও অপরিসীম ত্যাগ

জুলাই আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মৃতিরা: পরিবারদের বেদনা ও অপরিসীম ত্যাগ

জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় নিহত সাংবাদিকরা দেশের জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দেন। তাঁদের পরিবার এখনও অপেক্ষা করছে, আশা করছে, যেন তাদের প্রিয়জনরা ফিরে আসে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে সেই সময়কালে নিহত সাংবাদিকদের কথা। জীবনদানের মাধ্যমে তাঁরা দেশের মানুষের জন্য সত্য তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু তাঁদের পরিবার আজও শোক ও বেদনার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

ফারহানা ইসলাম পপি (নিপা), যিনি তার স্বামী হাসান মেহেদীর মৃত্যুর পর গভীর শোকের মধ্যে আছেন, বলেন, “ঠিক পাঁচ দিন আগে আমার ছোট মেয়ে মেহরাশ হঠাৎ করে তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকেছিল। আমি বিস্মিত হয়েছিলাম! কীভাবে সাত মাস বয়সী একটি শিশু এটা বলতে পারে! অন্তত আমার স্বামী তার মৃত্যু আগে এটি শুনতে পায়। তবে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হল, সে আর তার বাবার ভালোবাসা অনুভব করতে পারেনি।”

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার, ১৮ জুলাই জাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। একই দিন, দৈনিক ভোরের আওয়াজের সাংবাদিক শাকিল হোসেনও মারা যান, তিনি উত্তরা আজমপুর পুলিশ স্টেশনের সামনে প্রতিবাদী কর্মসূচি কভার করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

শাকিলের বাবা, মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, “শাকিল মারা যাওয়ার দিন আমি মারা গিয়েছি।”

১৯ জুলাই, ভিডিও সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়ো, যিনি ‘দ্য রিপোর্ট২৪’-এ কাজ করতেন, পুলিশ গুলিতে নিহত হন। প্রিয়ো তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সাংবাদিকতার জন্য এবং মৃত্যুর আগে একদিন তিনি বলেছিলেন, “আমি দেশের জন্য মারা যেতে চাই।” তাঁর মৃত্যু সেই কথার বাস্তবায়ন হয়।

এছাড়া, ১৯ জুলাই, আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাব, ৩৪, সিলেট থেকে দৈনিক নয়া দিগন্তের ব্যুরো প্রধান, বিএনপির এক সমাবেশ কভার করতে গিয়ে পুলিশ গুলিতে নিহত হন। তুরাবের ভাই, জাবুর আহমেদ বলেন, “তার শরীরে ৯৮টি গুলির আঘাত ছিল।”

এদের সকলেই ছিলেন দায়িত্বশীল সাংবাদিক, যারা সত্য প্রকাশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাঁদের ত্যাগ কোনো দিন ভুলে যাবে না দেশবাসী। ফারহানা তার স্বামীর শেষ কথা মনে করে বলেন, “মৃত্যুর মাত্র ৩০ মিনিট আগে আমি তাকে ঘরে ফিরে আসতে বলেছিলাম। সে বলেছিল, ‘তুমি ছেলে-মেয়েদের দেখো, ভালো থাকো। আমি এখানেই থাকতে হবে। এটা আমার দায়িত্ব।’”

এসব সাংবাদিক এবং তাঁদের পরিবারদের যন্ত্রণা শুধু তাদের হৃদয়ে নয়, পুরো জাতির হৃদয়ে গভীর দাগ রেখে গেছে। কিছু ক্ষত কখনো শুকায় না, কিছু শোক চিরকাল চলতেই থাকে।

RELATED NEWS

Latest News