Saturday, August 2, 2025
Homeজাতীয়জুলাই আন্দোলনের দেয়ালচিত্রে ইতিহাসের সাক্ষ্য

জুলাই আন্দোলনের দেয়ালচিত্রে ইতিহাসের সাক্ষ্য

কোটা আন্দোলন থেকে স্বৈরশাসকের পতন পর্যন্ত দেয়াল লেখার ভাষায় ফুটে উঠেছে রক্তাক্ত প্রতিরোধের গল্প

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের দিনগুলোয় যখন রাস্তায় স্লোগান ওঠেনি, তখনই দেয়ালগুলো নীরবে কথা বলতে শুরু করেছিল। প্রথমে ফিসফিস, পরে গর্জন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন তীব্র হওয়ার সাথে সাথে দেয়ালে লেখা ও গ্রাফিতি ছড়িয়ে পড়ে। শহরের দেয়ালগুলো একসময় রঙিন ক্যানভাসে পরিণত হয়, যা তরুণ প্রজন্মকে অভূতপূর্ব এক গণঅভ্যুত্থানে অনুপ্রাণিত করে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে ও পরে তৈরি হওয়া দেয়ালচিত্রের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পতনের আগের দেয়ালচিত্রগুলো মূলত কালো-সাদা বা লাল-কালো রঙে স্লোগানভিত্তিক ছিল। “মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”, “কোটা প্রথার সংস্কার চাই”, “মেধা না কোটা, মেধা মেধা”—এসব লেখা তখন প্রধানত দেখা যেত। কিছু দেয়ালে শহীদ আবু সায়েদ, মীর মুগ্ধসহ আন্দোলনের নিহতদের মুখচ্ছবিও আঁকা হয়েছিল।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পতনের পর তৈরি দেয়ালচিত্রগুলো আরও রঙিন ও চিত্রভিত্তিক হয়ে ওঠে। স্লোগানের সাথে যুক্ত হয় চিত্রকলা, যা দেয়ালগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলে। পতনের পরের গ্রাফিতিতে যেমন “Sheikh Hasina Palaise, Bangladesh Bachche” বা “Step down Hasina” লেখা হয়, তেমনি উঠে আসে আনন্দ ও স্বস্তির প্রকাশ।

চট্টগ্রাম কলেজের দুই শিক্ষার্থী জাবির তানজির নিবার ও দীপ্ত দাশ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, ২৮ জুলাই ভোররাতে তারা চওকবাজারের কলেজ রোডের এক দেয়ালে লিখছিলেন “খুনি হাসিনা স্বৈরচার / এই মুহূর্তে গদি ছাড়”। পুলিশের তল্লাশির কারণে কাজ অসম্পূর্ণ রাখতে হলেও, ৬ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তারা সেটি সম্পূর্ণ করেন এবং যোগ করেন, “Sheikh Hasina Palaise, Bangladesh Bachche”।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলো যেন সে সময় দেয়ালচিত্রের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই গ্রাফিতিগুলো ছিল তীব্র রাজনৈতিক বার্তা ও গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন বলেন, এই দেয়ালচিত্রগুলো জাতির সমষ্টিগত স্মৃতির অংশ। তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ের কাজগুলো রাগ, বেদনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পরবর্তী পর্যায়ে এগুলো মানুষের স্বপ্ন ও স্বাধীনতার বার্তাও তুলে ধরেছে। এগুলো সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত সপ্তাহগুলোতে যখন মানুষ কথা বলতে পারেনি, ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, তখন দেয়ালগুলোই সাহস যুগিয়েছিল। এখন প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নতুন দেয়ালচিত্র আঁকা হচ্ছে। তবে পুরনো ঐতিহাসিক চিত্র সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার প্রতি কর্তৃপক্ষ এখনও উদাসীন।

RELATED NEWS

Latest News