অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মঙ্গলবার বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণা’ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে বৈধতা প্রদান এবং দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত এই ঘোষণাটি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত “৩৬ দিনের জুলাই” কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস ২৮ দফার এই ঘোষণা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত অপরাধের দ্রুত বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিকেল ৫টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এক মিনিট নীরবতা পালন এবং একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই ঘোষণা’ পাঠ করা হয়। দিনব্যাপী এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ সমাবেশে অংশ নেয়। অনেকেই ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার দাবিতে স্লোগান দেন।
ঘোষণা পাঠের সময় প্রফেসর ইউনুসের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা মঞ্চে ছিলেন। অন্যদিকে, সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি বামপন্থী দল অনুষ্ঠানটি বর্জন করে। সিপিবি মহাসচিব রুহিন হোসেন প্রিন্স অভিযোগ করেন যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টের চেষ্টা চলছে।
ঘোষণার ২৮ দফায় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলি, সামরিক শাসনের অবসান এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং দুর্নীতি চরমে পৌঁছায় এবং জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতার বৈধ হস্তান্তর ঘটে।
কিছু রাজনৈতিক দল ঘোষণার বিষয়বস্তুকে স্বাগত জানালেও জামায়াত নেতারা হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, দলীয় বৈঠকের পর তারা আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন। বিএনপি, নাগরিক ঐক্য ও এনসিপি প্রাথমিকভাবে ঘোষণাটিকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছে।
সরকার জানিয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে ‘জুলাই সনদ’, যা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা হিসেবে পরবর্তীতে কার্যকর করা হবে।