বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চিরকাল স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে জুলাই আগস্ট আন্দোলন। এতে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-যুবক থেকে সাধারণ মানুষ, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে সহিংসতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এটা শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং একতা, ত্যাগ ও ভবিষ্যতের জন্য নিরলস আশা প্রকাশের একটি বড় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এ আন্দোলনের পেছনের একটি শক্তিশালী কারণ ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা ছাত্র আন্দোলন, যা পরে ১৫ জুলাইয়ে এক বড় পরিবর্তনের দিকে চলে যায়। তৎকালীন ছাত্রলীগের সদস্যরা যখন হঠাৎ করে প্রতিবাদী ছাত্রদের উপর আক্রমণ চালায়, তখন আন্দোলনকারীরা সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। এক সংঘর্ষের মধ্যে একটি তরুণীর রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা যেন আন্দোলনের চেহারা একেবারে পালটে দেয়। ওই দিনের সহিংসতার পর, আন্দোলনটি কেবল কোটা সংস্কারের চেয়ে অনেক বড় একটি আন্দোলন হয়ে ওঠে, যা ‘সরকার বিরোধী’ বা ‘অধিকার বিরোধী’ হয়ে ওঠে।
এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কয়েকজন তরুণ, যাদের মধ্যে একজন, যিনি এক সময় আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলেন, কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, “আমার পরিবারে পিতার প্রভাব ছিল, এবং আমার পরিবার আমাকে সাহস ও শৃঙ্খলা শেখায়, যা আমার আন্দোলনের শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।”
তবে, এর পেছনে এক গভীর অনুভূতি ছিল। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর এক দির্ঘ সম্পর্ক ছিল। তিনি তাঁর বোনের সাহসিকতা ও সংগ্রাম দেখেছিলেন, যার প্রভাব ছিল তার নিজের সিদ্ধান্তে। তার ভাষায়, “আমরা যদি এই পরিবর্তন না আনি, তবে অন্য কাউকে উঠে দাঁড়িয়ে আবার রক্ত ঝরাতে হবে।”
শুধু আন্দোলন নয়, বরং এটি ছিল একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীর রূপান্তরের আহ্বান। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন যে, তাদের আন্দোলনটি পূর্ণরূপে সফল হয়নি। “আমরা এখনও ন্যায়বিচার পাইনি। যারা পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন, তাদের হত্যাকারীরা আজও শাস্তি পায়নি,”—এ কথা জানিয়েছেন আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী।
এরপর, আন্দোলনটি এক নতুন পর্যায়ে চলে যায়, যেখানে তারা শুধুমাত্র কোটা সংস্কারের দাবি নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও দাবি জানাতে থাকে।
এছাড়া, আন্দোলনকারীরা এককথায় বলে দেন, “আমরা কোনো ‘মাইনাস মাইনাস’ রাজনীতি চাই না।” তাদের দাবি ছিল, যারা পুরো জাতিকে একসঙ্গে বিভক্ত করেছে, তাদের জায়গায় আমাদের উচিত নতুন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা।
আজকের দিনে, এই আন্দোলন শুধু একটি রাজনৈতিক বিরোধী অবস্থান নয়, বরং এটি একটি গভীর সামাজিক আবেদন হয়ে দাঁড়িয়েছে—যেখানে মানুষের অধিকার, একতা এবং নতুন দিনের আশা প্রতিফলিত হয়।