যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক।
বৃহস্পতিবার রাতে ম্যাসাচুসেটসের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ অ্যালিসন বোরো বক্তব্য দেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হলে তা “তাৎক্ষণিক ও অপূরণীয় ক্ষতি” ডেকে আনতে পারে। তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দেন যেন তারা এই ঘোষণা কার্যকর, প্রয়োগ বা রূপায়ণ না করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করে এবং এটি সেই আইনের অপব্যবহার যা অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্প ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
আবেদনে বলা হয়, “প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, বরং হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।”
এটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন এর আগেও একই বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সম্পর্কিত আরেকটি পদক্ষেপ স্থগিত করেছিলেন।
হার্ভার্ডের পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, প্রশাসনের এই দুটি উদ্যোগই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা, শিক্ষাক্রম ও মতাদর্শ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অংশ। তাদের ভাষায়, “এটি সরকারের একটি পরিকল্পিত ও ক্রমবর্ধমান প্রতিশোধমূলক অভিযান।”
বুধবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ঘোষণা স্বাক্ষর করেন যেখানে বলা হয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ছয় মাসের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
তিনি যুক্তি দেন, হার্ভার্ড এখন আর “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত নয়” এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
এই ঘোষণায় আরও বলা হয়, এরই অংশ হিসেবে হার্ভার্ডে থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে।
বিচারকের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখন প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারছে না। যদিও ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে হার্ভার্ড বিভিন্ন দেশের সঙ্গে “ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক” বজায় রেখেছে এবং তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
ট্রাম্প তার ঘোষণায় আরও দাবি করেন, হার্ভার্ডে অপরাধের হার বেড়েছে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে, যা তদন্ত করা উচিত।
এই সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধরনের পদক্ষেপ প্রশাসনের কৌশলগত অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
সংশ্লিষ্টরা এখন দেখছেন, আদালতের এই অন্তর্বর্তী আদেশ পরবর্তীতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হিসেবে রূপ নিতে পারে কি না। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষানীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকেই।