জন উইক নির্মাতা চ্যাড স্টাহেলস্কি সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে খোলামেলা ভাষায় প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিচালনার অভিজ্ঞতা, স্টুডিওর সঙ্গে বিরোধ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নানা অজানা তথ্য।
চারটি সফল সিনেমার পর, যেখানে কিয়ানো রিভসের মুখে ফুটে উঠেছে নিঃশব্দ প্রতিশোধের চরিত্র জন উইক, ফ্র্যাঞ্চাইজিটি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। তবে সিনেমাটির চতুর্থ কিস্তিতে প্রধান চরিত্রের মৃত্যু দর্শকদের মনে শেষের ছাপ ফেললেও, নির্মাতাদের কাছে এটা ছিল শুরুর নতুন দিক।
চ্যাড স্টাহেলস্কি বলেন, “আমি কখনো চেষ্টা করিনি বিশৃঙ্খল হতে, কিন্তু আমার কাজের ধরণ এমনই। অনেকেই আমাকে বলেন, ‘তুমি ভুলভাবে স্ক্রিপ্ট লিখছ।’ কিন্তু আমি প্রশ্ন করি, কারা ঠিকভাবে লিখছে? সিনেমার নিয়ম যদি একরকম হয়, তাহলে সব সিনেমা একরকম কেন লাগে?”
স্টুডিওর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কথাও উঠে আসে। বিশেষ করে দ্বিতীয় কিস্তিতে একটি চরিত্রকে সম্মানজনক উপায়ে শেষ করার সিদ্ধান্তে স্টুডিও আপত্তি তুলেছিল। তবে পরবর্তীতে পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দর্শকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখে স্টুডিও তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নেয়।
‘ব্যালেরিনা’ এবং ভবিষ্যৎ
চ্যাড স্টাহেলস্কি সম্প্রতি স্পিনঅফ ছবি ‘ব্যালেরিনা’র প্রিমিয়ারে অংশ নেন, যেখানে অভিনয় করেছেন আনা ডে আরমাস। সিনেমাটিতে কিয়ানো রিভসের উপস্থিতিও ছিল, যদিও তা মূল স্ক্রিপ্টে ছিল না।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রথমে আমি একটু দ্বিধায় ছিলাম, কিন্তু পরিচালকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য কিয়ানোকে যুক্ত করা হয়েছে। দর্শকদের ভালো লাগাও প্রমাণ করে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না।”
অন্যদিকে, জন উইকের জগতে তৈরি হওয়া ‘দ্য কনটিনেন্টাল’ টিভি সিরিজে স্টাহেলস্কির অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। তাঁর মতে, কিয়ানো রিভস এবং পরিচালকের ভিশনের অনুপস্থিতিতে সেই কাজটি স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়েছে।
‘জন উইক ৫’ কি আসবে?
জন উইক ৪-এ চরিত্রের মৃত্যু সত্ত্বেও পঞ্চম কিস্তির সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না নির্মাতা। তিনি বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী কাহিনী নিয়ে কাজ করছি। ৫০ পৃষ্ঠার প্লট আছে। যদি এটা আমাদের ভালো লাগে, কিয়ানোকে নিয়ে বসে আলোচনা করব।”
তবে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অতীতের দিকে ফিরে গিয়ে প্রিক্যুয়েল বানানোর কোনো আগ্রহ নেই তাঁর। “আমরা অতীত ব্যাখ্যা করতে চাই না। এনিমে মাধ্যমে যেটা হচ্ছে, তা নিজস্ব ভাষায় বলা যাচ্ছে বলে সেখানে তা মানানসই।”
অ্যাকশন সিনেমার সংকট
চ্যাডের মতে, বর্তমান অ্যাকশন সিনেমার বড় সমস্যা হলো গল্প এবং অ্যাকশনকে আলাদা করে দেখা। “একটি দৃশ্যে যদি দর্শক চরিত্রকে ভালোবাসে না, তবে চমৎকার অ্যাকশনও ম্লান হয়ে যায়,” বলেন তিনি।
তাঁর মতে, সফল সিনেমার মূল শক্তি সমন্বিতভাবে গল্প ও অ্যাকশন নির্মাণ, যেখানে পরিচালক নিজে অ্যাকশন পরিচালনা করেন।
জন উইক ফ্র্যাঞ্চাইজি তার সৃষ্টিশীল নির্মাণধারা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ চরিত্র চিত্রণের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী অবস্থান তৈরি করেছে। তবে পরিচালক স্টাহেলস্কির মতে, ভবিষ্যতে এই জগৎ টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন অর্গানিক গল্প আর স্টুডিওর ভরসা।
জন উইক ৫-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও, নির্মাতার প্রক্রিয়া এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বিশ্বাস দর্শকের জন্য আশাব্যঞ্জক। সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এটা স্পষ্ট, কিয়ানো ও স্টাহেলস্কির যুগলবন্দি এখনো শেষ হয়নি।
সূত্র: দ্যা হলিউড রিপোর্টার
