হলিউডের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী জিমি হান্ট, যিনি ‘ইনভেডার্স ফ্রম মার্স’, ‘চিপার বাই দ্য ডজন’ ও ‘সরি, রং নাম্বার’-এর মতো অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিমি ভ্যালির একটি হাসপাতালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঁর পুত্রবধূ এলিসা হান্ট।
১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্ম নেওয়া জিমি হান্ট মাত্র ছয় বছর বয়সে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। কুলভার সিটির একটি স্কুলে পড়ার সময় এমজিএম স্টুডিওর একজন স্কাউট তাঁর প্রতিভা আবিষ্কার করেন। এরপর থেকেই সিনেমায় নিয়মিত দেখা যায় এই ফ্রেকল-ওয়ালা লালচুলের ছেলেটিকে।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পিটফল’, ‘দ্য মেইটিং অফ মিলি’, ‘ফ্যামিলি হানিমুন’, ‘উইক-এন্ড উইথ ফাদার’, ‘লোইসা’, ‘হাই বারবারি’ ইত্যাদি। তবে দর্শকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান করে নেয় ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাই-ফাই ছবি ‘ইনভেডার্স ফ্রম মার্স’। এতে তিনি ডেভিড ম্যাকলিন চরিত্রে অভিনয় করেন, যে এক রাতে জানালা দিয়ে একটি উড়ন্ত থালার উপস্থিতি টের পায় এবং পরবর্তীতে এক অদ্ভুত মহাকাশযাত্রায় জড়িয়ে পড়ে। ছবিটি নির্মিত হয় মাত্র সাড়ে তিন সপ্তাহে এবং বাজেট ছিল তিন লাখ ডলারের নিচে।
অভিনয়ের পাশাপাশি জিমি ছিলেন একজন পরিশ্রমী ছাত্র। তিনি এমজিএম-এর ‘লিটল রেড স্কুলহাউজ’-এ পড়াশোনা করেছেন, যেখানে এলিজাবেথ টেলর ও রডি ম্যাকডাওয়ালের মতো সহপাঠী ছিলেন।
হান্টের মতে, তিনি অভিনয় থেকে অবসর নেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। কারণ হিসেবে বলেন, “আমি সিনেমা না করে হাই স্কুলে খেলাধুলায় সময় দিতে চেয়েছিলাম।” পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে তিন বছর কাজ করেন এবং কোড ব্রেকিংয়ে নিয়োজিত ছিলেন।
বয়সের ভারে থেমে গেলেও তাঁর জনপ্রিয়তা কখনো থামেনি। ‘ইনভেডার্স ফ্রম মার্স’-এর ১৯৮৬ সালের রিমেকে তিনি একজন পুলিশ প্রধানের ভূমিকায় আবার পর্দায় ফিরে আসেন। সেখানে তাঁর বিখ্যাত সংলাপ ছিল, “আমি ৪০ বছর ধরে এখানে আসিনি।”
ব্যক্তিজীবনে তিনি স্ত্রী রসউইথা, দুই পুত্র র্যান্ডি ও রন, এক পুত্রবধূ ক্রিস্টিনা, এক বোন বনি, নয়জন নাতি-নাতনি এবং ছয়জন প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী রেখে গেছেন। তাঁর কন্যা রসউইথা প্রায় এক দশক আগে মৃত্যুবরণ করেন।
হলিউডের সোনালী যুগে একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকা জিমি হান্টের এই প্রস্থান চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর স্মৃতি বেঁচে থাকবে সেলুলয়েডের পাতায়, দর্শকের হৃদয়ে।