ছয়বার অস্কার মনোনীত আইরিশ নির্মাতা জিম শেরিডান আবারো আইরল্যান্ডের আলোচিত এক অপরাধ কাহিনি নিয়ে হাজির হয়েছেন বড় পর্দায়। তাঁর নতুন সিনেমা ‘রি-ক্রিয়েশন’ ত্রিবেকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়েছে। এতে বাস্তব এবং কল্পনার সীমানা এক নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৯৬ সালে ফরাসি চলচ্চিত্র প্রযোজক সোফি তোসকান দু প্লান্তিয়েরের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। ওয়েস্ট কর্কের ছুটির বাড়ির সামনে নির্মমভাবে নিহত হন সোফি। এ হত্যাকাণ্ড আজও অমীমাংসিত।
এই ঘটনা নিয়ে ২০২১ সালে পাঁচ পর্বের তথ্যচিত্র ‘আ মার্ডার অ্যাট দ্য কাটেজ’ তৈরি করেছিলেন শেরিডান। তবে এবার তিনি মনে করছেন, তথ্যচিত্রে যা বলা যায়নি, সেই সত্যগুলো তুলে ধরার জন্য গল্পচিত্রের আশ্রয় নেওয়া জরুরি ছিল। তাই ‘রি-ক্রিয়েশন’ সিনেমায় তিনি কল্পিত আদালতের দৃশ্য তৈরি করেছেন। এখানে বিচার হয়েছে সেই মামলার, যা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিষ্পত্তি হয়নি।
শেরিডান বলেন, “আমি দেখতে চাইছিলাম ডকুমেন্টারি, বাস্তবতা ও কল্পনার মাঝখানে থাকা অস্পষ্ট সীমারেখাগুলোকে। তাই গল্পের কাঠামো ছিল নমনীয়। প্রাথমিকভাবে একটি রূপরেখা ছিল, তারপর সেটি মূলত তাৎক্ষণিক অভিনয়ে পরিণত হয়েছে।”
সিনেমার মূল অংশ ধারণ করা হয়েছে একটি জুরি কক্ষে, যেটি অনুপ্রাণিত ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ চলচ্চিত্র থেকে। একই সঙ্গে ‘অ্যানাটমি অব অ্যা ফল’ সিনেমার প্রভাবও দৃশ্যমান। এতে বিচারপ্রক্রিয়া এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
‘রি-ক্রিয়েশন’ সিনেমার একটি দৃশ্যে জুরি সদস্যরা হত্যার রাতে সোফির গতিবিধি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। শেরিডান নিজেই জুরি ফোরম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এতে আরও রয়েছেন ভিকি ক্রিপস, কোলম মিনি, আইডেন গিলেন এবং জন কনরসের মতো তারকারা।
মূল অভিযুক্ত ইংরেজ সাংবাদিক ইয়ান বেইলির চরিত্রে নিঃশব্দ ভূমিকায় দেখা গেছে কোলম মিনিকে। বেইলিকে আইরল্যান্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি, তবে ফ্রান্সে অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০২৪ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি নির্দোষ থাকার দাবি করে গেছেন।
জিম শেরিডান ট্রু-ক্রাইম ধারার প্রচলিত ধারা নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আজকাল ট্রু-ক্রাইম প্রায়ই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়ছে। আমার কাছে এই প্রবণতা অস্বস্তিকর। বরং সমবেদনাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত।”
মাত্র তিন সপ্তাহের প্রস্তুতিতে এই সিনেমার শুটিং শেষ হয়েছে। ওয়েস্ট কর্কে কিছু বাহ্যিক দৃশ্য ধারণ করা হলেও, অধিকাংশ অন্তর্দৃশ্য ডাবলিন এবং লুক্সেমবার্গের সেটে ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে সোফি হত্যা মামলাটি আইরিশ পুলিশ বাহিনীর গার্ডা সিরিয়াস ক্রাইম টিমের ‘কোল্ড কেস’ হিসেবে পুনরায় পর্যালোচিত হচ্ছে। শেরিডান ও সহ-পরিচালক ডেভিড মেরিম্যান আশা করছেন, তাঁদের সিনেমা নতুন করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।
মেরিম্যান বলেন, “আমরা আশা করছি, অন্তত আইরল্যান্ডে এই সিনেমা আলোচনার সূত্র হয়ে উঠবে। মানুষকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করবে। যেন সত্যিকারের অপরাধীকে খুঁজে বের করা যায়, কেবল ইংরেজ বলে ইয়ান বেইলিকে দোষী বলে ছেড়ে দেওয়া না হয়।”