পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথ অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সন্তানদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রোধ করতে হুমকি দিচ্ছে পাকিস্তান সরকার।
এক্স-এ দেওয়া পোস্টে জেমাইমা বলেন, ইমরান খানের ছেলে দুজন যদি পাকিস্তানে এসে বাবার সঙ্গে দেখা করতে চায়, তবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি একে ‘ব্যক্তিগত প্রতিশোধ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য, ৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সংসদীয় আস্থাভোটে পদচ্যুত হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মামলা চলছে, যেগুলো তাঁর সমর্থকদের মতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ মন্তব্য করেন, যদি ইমরানের ছেলেরা আন্দোলনে অংশ নেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খানের দুই ছেলে—সুলেমান খান (২৮) ও কাসিম খান (২৬)—যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। মে মাসে তাঁরা প্রকাশ্যে বাবার মুক্তির দাবিতে বক্তব্য দেন।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) আগামী ৫ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরী DW-কে বলেন, “তাঁরা পাকিস্তানে ভ্রমণ করতে পারেন, তবে আইন লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পিটিআইয়ের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সৈয়দ জুলফিকার বুখারি বলেন, “তাঁদের আগমন সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে, তাই তাদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত গুজব ছড়ানো হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসমা শিরাজি মনে করেন, ইমরানের সন্তানরা হয়তো পাকিস্তানে আন্দোলনে যোগ দেবে না। “তাদের মূলত জনমত জোগাড়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
আইন বিশেষজ্ঞ ওসামা মালিক বলেন, ইমরানের সন্তানদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া অনুচিত। তবে তিনি তাদের রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার পরামর্শ দেন, কারণ তাঁদের ভিসা শর্তানুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, “তারা পাকিস্তানি বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। আন্দোলনে তেমন প্রভাব ফেলতে না পেরে উল্টো বিভাজন তৈরি করতে পারে।”
এদিকে পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গানডাপুর বলেছেন, “খান সাহেবের মুক্তির লক্ষ্যে আগামী ৯০ দিন চূড়ান্ত লড়াই হবে।”
এই আন্দোলন ঘিরে সরকার একটি নতুন আধাসামরিক বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। আফগান সীমান্তে নিয়োজিত একটি বাহিনীকে রূপান্তর করে এটি ‘ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারি’ নামে গঠন করা হবে। এই বাহিনী দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় কাজ করবে।
তবে বিরোধী দলগুলো ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা করছে, এই বাহিনী রাজনৈতিক অধিকার দমনে ব্যবহার করা হতে পারে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও আলোচনা হয়। টম ল্যান্টস মানবাধিকার কমিশনের সহসভাপতি রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ বলেন, “পাকিস্তানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইমরান খানের কারাবাস এবং সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে আরও জোরালো অবস্থান নেওয়া।”
এই পরিস্থিতিতে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা এবং কারিশমা এখনো আন্দোলনের বড় চালিকা শক্তি হয়ে আছে। তাঁর দল পিটিআই এই সমর্থনকে কেন্দ্র করেই ৫ আগস্ট থেকে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।