বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার একটি বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে। দলের আমির ড. শফিকুর রহমান সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক লড়াইয়ের ঘোষণা দেন এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থকের আগমনে রাজধানীর রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। সমাবেশটি সাত দফা নির্বাচনী দাবির ভিত্তিতে সংগঠিত হয়।
ড. শফিকুর রহমান তার বক্তব্য শেষ করলেও স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে তিনি দুবার মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকদের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তিনি বক্তব্য বন্ধ করতে রাজি হননি।
জামায়াত এই সমাবেশকে দলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিবাহী, সেখানে জামায়াতের সমাবেশ রাজনৈতিক কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান জানান, “এই প্রথমবার জামায়াত নিজ নামে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করেছে। এর আগে জোট বা ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে কিছু প্রোগ্রাম হয়েছে।”
ড. শফিকুর রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের পর আল্লাহ আমাদের এই সমাবেশ করার সুযোগ দিয়েছেন। এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেকটি লড়াই শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় এলে মন্ত্রীরা সরকারি প্লট বা করমুক্ত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। সকল দায়িত্ব শেষ হলে তারা জাতির কাছে স্বচ্ছভাবে হিসাব দেবে।
তার ভাষ্য, “আমরা ঘুষ খাব না, দুর্নীতি করব না এবং অন্যদেরও করতে দেব না। আমাদের বাংলাদেশ এটাই হওয়া উচিত।”
আরও পড়ুন: জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে পিআর নির্বাচনের দাবি ও রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক
তিনি বলেন, “এই রাজনৈতিক সংগ্রাম শুধু উচ্চবিত্তের জন্য নয়, বরং রিকশাওয়ালা, মেথর, কৃষক, চা শ্রমিকের জন্য।”
ড. শফিক ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর এবং ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার দাবি করেন।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শুরু হয়। মূল অনুষ্ঠান দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।
ভোরের আগে থেকেই হাজার হাজার কর্মী সমাবেশস্থলে জড়ো হয়। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটেই মঞ্চের সামনে জমায়েত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
নির্বাচনী সাত দফা দাবির মধ্যে ছিল:
সকল গণহত্যার বিচার
মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন
জুলাই চার্টার ও ঘোষণা বাস্তবায়ন
শহিদ ও আহতদের পুনর্বাসন
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন
প্রবাসীদের ভোটাধিকার
নির্বাচনের আগে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা
সমাবেশস্থলে ৩৩টি এলইডি স্ক্রিন, ৩০০ মাইক্রোফোন, ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, অস্থায়ী টয়লেট, আলাদা নামাজের জায়গা ও মেডিকেল সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়।
পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোড, সোনারগাঁও, মাদানপুরসহ বিভিন্ন রুটে বাস সংকট দেখা যায়।
জামায়াত সমমনা ডানপন্থী ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়। বিএনপিসহ কিছু দল আমন্ত্রণ পেলেও অংশ নেয়নি।
তবে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল।
এছাড়া, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একটি প্রতিনিধি দলও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। নাগরিক ঐক্য ও এবি পার্টি এই সমাবেশে অনুপস্থিত ছিল।
জামায়াত গণসংহতি আন্দোলনকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, কিন্তু তারা অংশ নেয়নি।
এই সমাবেশ জামায়াতে ইসলামীকে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করানোর ইঙ্গিত দিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।