পাঁচ বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চীন সফরে যাচ্ছেন। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি বেইজিং পৌঁছান বলে জানানো হয়েছে। এটি তার প্রথম চীন সফর, গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পর ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক যখন উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে।
জয়শঙ্করের সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন সম্প্রতি চীনের সামরিক সহায়তায় পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এপ্রিল মাসে পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হলে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়ে পাকিস্তান ও পিওকে-তে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। পাকিস্তান এতে চীনের সামরিক সহায়তা পায় বলে অভিযোগ উঠে।
জয়শঙ্কর বর্তমানে একটি দুই-দেশ সফরের অংশ হিসেবে চীন সফরে রয়েছেন। তিনি তিয়ানজিন শহরে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেবেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ভারত-চীন সম্পর্কের পটভূমি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের মে মাসে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর সামরিক উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর জুনে গালওয়ানে ৭ ঘণ্টার সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। চীন নিজের হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ না করলেও একাধিক সূত্রে দাবি করা হয়, তাদের ক্ষয়ক্ষতি ছিল দ্বিগুণের বেশি।
২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজানে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু স্থগিত যন্ত্র পুনরায় সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর পূর্ব লাদাখের ডেপসাং ও ডেমচকে যৌথ টহল ও সামরিক সমঝোতার ঘোষণা আসে।
তবে এই শান্তি প্রচেষ্টার মাঝেই চীনের পাকিস্তানঘেঁষা অবস্থান ভারতকে উদ্বিগ্ন করেছে। ভারতের উপসেনাপ্রধান রাহুল আর সিং বলেন, পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জামের ৮১ শতাংশই চীনে তৈরি। তিনি বলেন, “এক সীমান্ত, দুই শত্রু। সামনের মুখ পাকিস্তান হলেও চীন তার পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।”
পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পরও চীন তার ‘আয়রনক্ল্যাড’ বন্ধু পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান অব্যাহত রাখে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
জয়শঙ্করের সফরের ঠিক আগে চীনে গিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ধারনা করা হচ্ছে, এসব সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।