ইসরায়েলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আক্রমণে বাবা-মাকে হারানোর পর প্রতিশোধ নয়, বরং শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পর্যটন উদ্যোক্তা মাওজ ইনন। তাঁর মতে, সহিংসতা ও প্রতিশোধ কখনো সমাধান আনতে পারে না। বরং আলোচনাই দুই পক্ষের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে।
৪৯ বছর বয়সী ইনন এখন সেই হাজারো ইসরায়েলির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, যারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ইসরায়েলি ভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন জাজিম কমিউনিটি অ্যাকশন এই উদ্যোগ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে “যুদ্ধ নয়, স্বীকৃতি চাই” শিরোনামে একটি পিটিশনে ৮ হাজার ৫০০ এর বেশি ইসরায়েলি স্বাক্ষর করেছেন। আয়োজকদের আশা, অন্তত ১০ হাজার স্বাক্ষর নিয়ে তারা নথিটি জাতিসংঘে জমা দেবেন।
ইসরায়েলি শান্তিকর্মী ইনন বলেন, “প্রতিশোধ নিয়ে বাবা-মাকে ফেরানো যাবে না। বরং এই প্রতিশোধই শতাব্দী ধরে চলা রক্তপাত ও সহিংসতার চক্রকে আরও বাড়াবে।” তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া কোনো শাস্তি নয়, বরং ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার একটি ধাপ।
শান্তিকর্মীরা বলছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দুই জাতির সমান মর্যাদা নিশ্চিত করবে। এই দাবির অন্যতম উদ্যোক্তা রালুকা গানেয়া বলেন, “অক্টোবরের ঘটনার পর স্পষ্ট হয়েছে, সংঘাত পরিচালনার প্রচলিত নীতি ব্যর্থ হয়েছে। এখন সামনে দুটি পথ—এক পক্ষকে ধ্বংস করা, অথবা দুই রাষ্ট্র সমাধান।”
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২১ শতাংশ ইসরায়েলি মনে করেন যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে। এটি ২০১৩ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন হার।
জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশনে ফ্রান্স, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। মানবিক সংকটে বিপর্যস্ত গাজা প্রসঙ্গও বৈঠকে প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ইয়োনাতান জেইগেনও, যিনি ৭ অক্টোবর কিবুটজ বেয়েরিতে নিহত শান্তিকর্মী ভিভিয়ান সিলভারের ছেলে। তিনি বলেন, “একটি টেকসই ভবিষ্যৎ কেবল তখনই সম্ভব, যখন দুই জাতি সমান অধিকার নিয়ে এই ভূমি ভাগাভাগি করবে। ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার মৌলিক।”
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নই নেই। তাঁর ডানপন্থি সরকারের কিছু অংশ পশ্চিম তীরে আরও বসতি স্থাপনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
সবকিছুর পরও শান্তিকর্মীরা আশাবাদী। জেইগেন বলেন, “এক সময় ফরাসি ও জার্মানরা ভাবতেও পারত না যে তারা এক কনফেডারেশনের অংশ হবে। আজ তারা পারে। আমি মনে করি, শান্তি যেমন বাস্তবসম্মত, যুদ্ধও তেমন।”