গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীরতর হয়েছে।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা চালানো হয়। গাজা শহরের প্যালেস্টাইন স্টেডিয়ামের কাছে, যেখানে বাস্তুচ্যুত লোকজন আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে ১২ জন নিহত হন। শিফা হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, আরও আটজন নিহত হন একটি আবাসিক ভবনে হামলায়। নাসের হাসপাতালে অন্তত ২০ জনের মৃতদেহ নেওয়া হয়েছে।
হামলার এই ধারাবাহিকতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি, আশা করছি শিগগিরই সমাধান আসবে।” তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হতে পারে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপির বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলি কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করবেন। আলোচনায় গাজা, ইরান এবং অন্যান্য ইস্যু থাকবে।
ইসরায়েল মার্চ মাসে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত এই যুদ্ধে গাজায় ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মৃতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।
যুদ্ধের সূচনা হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন জিম্মি এখনো গাজায় রয়েছে, তবে অনেকে জীবিত কি না তা নিশ্চিত নয়।
হামাস বারবার বলেছে, তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যদি গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে নিরস্ত্র ও গাজা থেকে উৎখাত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
এদিকে খাদ্য সংকটে পড়া গাজাবাসী চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। প্রায় আড়াই মাস খাদ্য প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকার পর মে মাসের মাঝামাঝি কিছু সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করে। তবে জাতিসংঘের মাধ্যমে বিতরণ ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর লুটপাট ও ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ের কারণে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সহায়তা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে অনেক ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের দাবি, ইসরায়েলি সেনারা ওই সব রাস্তায় মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব ঘটনায় বেসামরিক লোকজন আহত হয়েছে কি না তা তদন্ত করছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা থাকলেও প্রতিদিনের প্রাণহানি এবং মানবিক বিপর্যয় বন্ধ না হলে সংকট আরও তীব্র হবে।