গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জা ‘হলি ফ্যামিলি কম্পাউন্ড’-এ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে জেরুজালেমের লাতিন প্যাট্রিয়ার্কেট।
এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পোপ লিও চতুর্দশ। এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, ওই দিনই গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে প্যাট্রিয়ার্কেট জানিয়েছে, “গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি, আজ সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় গাজার ক্যাথলিক গির্জায় দুইজন নিহত হয়েছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “যুদ্ধে নিরীহ নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এই বর্বর যুদ্ধের দ্রুত অবসান চাই।”
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, “গাজা সিটির ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন।”
ঘটনার সময় আহতদের গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালের (বাপ্তিস্ট হাসপাতাল) অস্থায়ী তাঁবুতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পাদ্রি গ্যাব্রিয়েল রোমানেল্লির পায়ে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।
এ সময় কয়েকজন আহত ব্যক্তি অক্সিজেন মাস্কসহ স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে আসেন।
প্যাট্রিয়ার্কেট আরও জানায়, গির্জা কম্পাউন্ডের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। “৬০০-এর বেশি শরণার্থী, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও ৫৪ জন প্রতিবন্ধী—তাদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত পবিত্র এ স্থানে হামলা মানব মর্যাদা ও ধর্মীয় পবিত্রতার চরম লঙ্ঘন।”
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইসরায়েল কখনোই ধর্মীয় উপাসনাস্থলকে লক্ষ্যবস্তু বানায় না এবং এ ধরনের ক্ষতিতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানিও গির্জায় হামলাকে “খ্রিস্টান উপাসনালয়ের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর আঘাত” বলে মন্তব্য করেছেন।
গাজার ২০ লাখ মানুষের মধ্যে আনুমানিক ১ হাজার খ্রিস্টান রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই অর্থোডক্স হলেও লাতিন প্যাট্রিয়ার্কেটের তথ্যমতে সেখানে আনুমানিক ১৩৫ জন ক্যাথলিক রয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ক্যাথলিক ও কিছু অর্থোডক্স খ্রিস্টান গাজা সিটির এই গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস তার মৃত্যুর একদিন আগে ইস্টার বার্তায় গাজায় মানবিক পরিস্থিতিকে “অসহনীয়” বলে নিন্দা জানিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা ‘ল’উভ্র দ’অরিয়েন্ট’-এর প্রধান মোনসিনিয়র পাসক্যাল গোলনিশ বলেন, “এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটি একটি পবিত্র উপাসনালয়, শান্তির বার্তা বহনকারী একটি স্থান। এখানে কোনও কৌশলগত লক্ষ্য ছিল না, শুধু সাধারণ মানুষ ও পরিবার ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই হামলাকে কঠোরভাবে নিন্দা করি এবং এর দায়ভার ইসরায়েলের কাঁধেই বর্তায়।”
হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে অন্তত ৫৮ হাজার ৫৭৩ জন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
গাজায় চলমান সংবাদ অবরোধ এবং বহু এলাকায় প্রবেশে বাধার কারণে স্বাধীনভাবে এসব তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।