ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : গাজা উপত্যকার উত্তরের একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫২ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ওই স্কুলে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জনই ছিলেন নারী ও শিশু। গাজা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, অধিকাংশ হতাহতই সাধারণ নাগরিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বোমা হামলা শুরু হয়। জানালা ও পাথর আমাদের উপর ভেঙে পড়ে। আমাদের ছোট শিশুদের কক্ষেই মৃত্যু হয়েছে।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, উক্ত স্থাপনাটিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ উপস্থিতি ছিল। তবে স্থানীয় সূত্র এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, নিহতদের কারও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি।
হামলার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আশ্রয় নেওয়া বহু পরিবার সেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে ঘুমাচ্ছিলেন। হামলার পরবর্তী মুহূর্তে দেখা যায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষ, আহতদের কান্না, আর বেঁচে যাওয়া পরিবারগুলোর আর্তনাদ।
এই মানবিক বিপর্যয় বোমা হামলাতেই সীমাবদ্ধ নয়। গাজায় ১১ সপ্তাহ ধরে চলমান অবরোধের কারণে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে কিছু সীমিত ত্রাণ প্রবেশ করলেও জাতিসংঘ একে ‘চামচভর্তি সাহায্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যা দৈনিক চাহিদার তুলনায় নগণ্য।
ক্ষুধার তাড়নায় অনেক ফিলিস্তিনি জীবন ঝুঁকিতে ফেলে ত্রাণবাহী ট্রাকের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। একজন মা বলেন, “আমার সন্তান প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার চায়। আমি রাতে ঘুমোতে পারি না এই ভেবে যে ওরা কী খাবে, কীভাবে বাঁচবে।”
আরও পড়ুন:
- গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে মানবিক বিপর্যয়, খাদ্য ও চিকিৎসার তীব্র সংকট
- গাজায় খাদ্য সহায়তা ঘিরে বিশৃঙ্খলা, হামলায় নিহত ৬ হামাস নিরাপত্তা সদস্য
এদিকে গাজায় সহায়তাকারী একটি মার্কিন-সমর্থিত মানবিক সংস্থার প্রধান পদত্যাগ করেছেন। তিনি জানান, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার নীতির সঙ্গে কাজ করা এখানে আর সম্ভব নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে গাজা উপত্যকার অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেখানে আটকে পড়া দুই মিলিয়ন মানুষের জন্য ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিনই গাজার মানুষদের সামনে নতুন এক দুঃসহ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে – তারা বাঁচার জন্য খাবারের সন্ধানে বের হবেন, না কি গোলার আঘাতে প্রাণ হারাবেন। বিশ্ব এই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে থাকলেও, সমাধানের পথ যেন আরও ধোঁয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে।