Sunday, June 22, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র, প্রাণ হারাচ্ছে...

গাজায় মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র, প্রাণ হারাচ্ছে আরও মানুষ

গাজায় মানবিক সহায়তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তার জন্য জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রেড ক্রস।

এর মাত্র দুই দিন আগে, রবিবার, গাজায় আরও একটি সহায়তা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৩১ জন নিহত হন বলে স্থানীয় একটি হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন। তবে এসব মৃত্যুর জন্য দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল।

এই ঘটনাগুলো এমন এক সময় ঘটেছে, যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় নতুন সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, নতুন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষতার মানদণ্ড ভঙ্গ করছে।

আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা একটি অপরাধ। কিন্তু গাজায় যা ঘটছে, তা নিছক মানবিক সংকট নয়। এটি মানুষের তৈরি এক দুর্যোগ, যেখানে দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে অনাহারে রেখে তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

২০০৭ সালে হামাস নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে গাজা ভূখণ্ডে অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল ও মিসর। তখন থেকেই গাজার জনগণের জন্য জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় উপকরণ সীমিত করে দেওয়া হয়।

সেসময় ইসরায়েল সরকারের একটি নীতিগত দলিল “রেড লাইনস” প্রকাশ্যে আসে। এতে গাজাবাসীদের কী পরিমাণ ক্যালোরি দরকার তা হিসেব করে খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন সময় লেন্টিল, পাস্তা ও গুঁড়োদুধের মতো পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিরাপত্তার কারণ নয় বরং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিবেচনায়।

ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দোভ ওয়েইগলাস বলেছিলেন, “আমরা চাচ্ছি ফিলিস্তিনিরা যেন ডায়েটে থাকে, তবে ক্ষুধায় না মরে।”

এর ফলে গাজার অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব, বিদ্যুৎ সংকট, অকার্যকর হাসপাতাল ও ন্যূনতম মানবিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে এই ভূখণ্ডকে ‘উন্মুক্ত কারাগার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে অনেক মানবাধিকার সংস্থা।

বর্তমানে খাদ্য সরবরাহ আরও সীমিত করা এবং ধীরে ধীরে পুরো জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন বলেন, “হামাস ত্রাণ সামগ্রী চুরি করছে” এই প্রচার সত্য নয়। ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, নতুন এই সহায়তা ব্যবস্থা মানবিক সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলছে।

তবে পশ্চিমা দেশগুলো এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

মানবাধিকার কর্মীদের প্রশ্ন, “আন্তর্জাতিক আইনের এমন স্পষ্ট লঙ্ঘনের পরও বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা কি ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধকে আরও উৎসাহিত করবে?”

এই সংকট সমাধানে অবরোধ তুলে খাদ্য, পানি ও ওষুধের প্রবাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি উঠেছে।

ইতিহাস এই মুহূর্তটিকে মনে রাখবে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, আমরা কি নীরব প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে থাকব, নাকি মানবতার পক্ষে সোচ্চার হব?

RELATED NEWS

Latest News