ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসের কাছ থেকে ভুল মানবদেহ পাওয়ার ঘটনায় দেশটি প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি বলেছেন, এটি গাজা যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের সমান।
নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেন, হামাস যে দেহাবশেষ ফেরত দিয়েছে, তা এমন এক ব্যক্তির যার দেহ আগেই ইসরায়েলি বাহিনী উদ্ধার করেছিল। ওই দেহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত ওফির সারফাতির বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। সারফাতির দেহ যুদ্ধের শুরুর দিকেই উদ্ধার করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি মঙ্গলবারই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং “ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ” নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
অন্যদিকে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মানছে এবং যত দ্রুত সম্ভব অবশিষ্ট মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ হস্তান্তরের চেষ্টা করছে। তবে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে।
হামাস জানায়, ভারী ধ্বংসাবশেষ ও মৃতদেহ শনাক্তের সরঞ্জাম ঘাটতির কারণে অনেক দেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। তবু তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির নেতানিয়াহুকে হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এক সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজন, কারণ এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় হামাস মৃত জিম্মিদের দেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি তিনি “খুব ঘনিষ্ঠভাবে” পর্যবেক্ষণ করবেন।
চলমান যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, হামাস জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে। ইসরায়েলও তাদের অভিযান বন্ধ করে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।
চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস এখনও মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদিও ইসরায়েল দাবি করছে যে হামাসের এসব দেহ উদ্ধার করতে বড় কোনো বাধা নেই।
মিশর থেকে ভারী যন্ত্রপাতি আসার পর গাজায় দেহ অনুসন্ধান তৎপরতা আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও উত্তরাঞ্চলের নুসেইরাতে খননকাজ চালাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, অনেক দেহ হামাসের ভূগর্ভস্থ টানেল নেটওয়ার্কে রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, আরও কয়েক হাজার নিখোঁজ রয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামাস হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জন জিম্মি হিসেবে গাজায় নেওয়া হয়।
এখনও গাজা জুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী টানেল ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানিয়েছেন, এখনো প্রায় ৬০ শতাংশ টানেল অক্ষত রয়েছে এবং সেগুলো ধ্বংসের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
