ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : পশ্চিম এশিয়ায় আবারও উত্তেজনার ঘনঘটা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই ইসরায়েল হুমকি দিয়েছে ৭ ঘণ্টার নোটিশে ইরানের উপর হামলা চালানোর। ইসরায়েলের কট্টরপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সামাজিক মাধ্যমে এই হুমকি উত্থাপন করেন।
মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েল যেকোনো সময় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইসরায়েলের একক হামলা কার্যকর হবে না। কারণ, ইরানের বেশিরভাগ পারমাণবিক স্থাপনা যেমন ফরো ও নাটাঞ্জ গভীর মাটির নিচে স্থাপিত এবং শক্তিশালী বাঙ্কারে সুরক্ষিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বাঙ্কার ধ্বংসে প্রয়োজন ‘মাদার অফ অল বম্বস’ নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের GBU-43B বোমার মতো ক্ষমতাধর অস্ত্র, যা ইসরায়েলের হাতে নেই। এ ছাড়া ইরান হাজার কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলোর মাঝপথে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন পড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া কঠিন।
সামরিক শক্তিতে তুলনা করলে দেখা যায়, ইরানের জনসংখ্যা ৮ কোটি ৭৫ লাখের বেশি, যেখানে ইসরায়েলের জনসংখ্যা ৯ মিলিয়ন। ইরানের সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার, ইসরায়েলের ১ লাখ ৭০ হাজার। প্রতিরক্ষা বাজেটে ইসরায়েল এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানসংখ্যায় ইরান তুলনামূলক এগিয়ে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (IRGC) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি জানিয়েছেন, “আমরা সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। আমাদের আঙুল ট্রিগারে রয়েছে।” ইরান সামরিকভাবে আত্মনির্ভরশীল এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে ইসরায়েলের হুমকি কতটা বাস্তব তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে চলছে। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের হামলা কেবল রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
অক্টোবর ২০২৪ সালে সর্বশেষ ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র হুথি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলকে থাড ও অ্যারো সিস্টেম সরবরাহ করেছিল। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ইসরায়েল এককভাবে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে পারবে কিনা, সেটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ানো গোটা অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আরও সংযমী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা।
সূত্র: WION