গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান জোরদার হওয়ায় নতুন করে শুরু হয়েছে গণঅপসারণ। উপকূলীয় সড়ক ধরে হাজারো মানুষ ট্রাক, ট্রলি, ভ্যান ও হাতগাড়িতে গাদাগাদি করে দক্ষিণের দিকে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে তারা পেছনে রেখে আসছেন ধ্বংসস্তূপ। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলী এখনো উড়ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর ওপর।
জাতিসংঘের হিসাবে গাজা সিটি ও আশপাশে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ বাস করে। শহরটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র। ইসরায়েলি সেনারা মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, তারা শহরটি দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বাসিন্দাদের অবিলম্বে দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে।
গাজা সিটি থেকে পালানো সায়েব আল-মোবায়েদ বলেন, “তীব্র গোলাবর্ষণের মুখে আমাদের জোর করে দক্ষিণে পাঠানো হয়েছে। অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছের মসজিদও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।”
আহমেদ শামলাখ নামের আরেক বাসিন্দা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সীমান্তগুলো খুলে দিন, জীবনকে স্বাভাবিক হতে দিন। যথেষ্ট হয়েছে।”
ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় আল-মাওয়াসিকে “মানবিক এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করেছে, যেখানে তারা সহায়তা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা বলছে। তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সেখানে জায়গার অভাব, পানির সংকট ও খাবারের ঘাটতির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, “মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলেও জীবনধারণের ন্যূনতম চাহিদা নেই। আশ্রয়, খাবার, পানি বা টেন্ট—কিছুই নেই।”
৩৬ বছর বয়সী খালেদ খুয়াইতার বলেন, “আমি ইসরায়েলকে জিজ্ঞাসা করি, আমরা যাব কোথায়? যারা আল-মাওয়াসি গেছে, তারাও কোনো জায়গা পায়নি।”
৩০ বছর বয়সী মিরভাত আবু মুআম্মার বলেন, তিনি পরিবারসহ বারবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। “স্থানান্তর অপমানজনক। দুই বছর ধরে আমরা শান্তি পাইনি, শুধু হত্যা, ধ্বংস আর হতাশা দেখেছি।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৪ হাজার ৫২২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।