Monday, November 10, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় হামলা কমাল ইসরায়েল, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় নতুন শান্তির আশা

গাজায় হামলা কমাল ইসরায়েল, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় নতুন শান্তির আশা

হামাসের সমঝোতার ইঙ্গিত ও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দেখছেন পর্যবেক্ষকরা

গাজায় টানা দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে শনিবার সাময়িকভাবে হামলা কমিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে বোমা বর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানান এবং জানান যে, হামাস তাঁর শান্তি পরিকল্পনার আওতায় জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল পর্যন্ত তুলনামূলক শান্ত অবস্থা দেখা গেলেও দিনভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ২১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশু ছিল।

গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় এক পরিবারের ঘরে বোমা হামলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে। স্থানীয় চিকিৎসকেরা জানান, পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শুক্রবার রাতে হামাস জানায়, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার কিছু মূল শর্তে রাজি আছে। এর মধ্যে যুদ্ধের অবসান, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং উভয়পক্ষের বন্দিদের মুক্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত। এই ঘোষণার পর ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েল আপাতত বোমা হামলা বন্ধ করেছে, আমি হামাসকে আহ্বান জানাই দ্রুত চুক্তিতে এগিয়ে যেতে। সময় নষ্টের সুযোগ নেই।”

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প তাঁর দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারকে মিশরে পাঠাচ্ছেন পরিকল্পনার কারিগরি দিক চূড়ান্ত করতে। সেখানে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা ‘পরোক্ষ আলোচনা’য়ে অংশ নেবেন বলে মিশরের সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে।

ইরান-সমর্থিত ইসলামিক জিহাদও শনিবার হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে, যা পর্যবেক্ষকদের মতে জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

হেবরনের বাসিন্দা শরিফ আল-ফাখুরি বলেন, “গাজার মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জনগণের মধ্যে একটি। এখন যদি শান্তির আলো দেখা যায়, সেটাই বড় বিজয়।”

তবে ইসরায়েলের ভেতরে অনেকেই সন্দিহান। জেরুজালেমের বাসিন্দা জামাল শিহাদা বলেন, “হামাস রাজি হয়েছে, কিন্তু যদি নেতানিয়াহু আবার পিছিয়ে যান, তাহলে সব ভেস্তে যাবে।”

আরো পড়ুন: গাজার যুদ্ধবিরতিতে নতুন আশার আলো, ট্রাম্পের উদ্যোগে হামাসের ইতিবাচক সাড়া

নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, ইসরায়েল ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ—জিম্মি মুক্তির জন্য—প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে আক্রমণ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজায় অভিযান শুরু করে। ঐ ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, দুই বছরে ইসরায়েলি অভিযানে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।

ইসরায়েলি জিম্মি পরিবারগুলোর সংগঠনের সদস্য এফরাত মাচিকাওয়া বলেন, “এখন সময় যুদ্ধ শেষ করার। সব জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রচেষ্টা এ যুদ্ধে এক নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে। তবে চূড়ান্ত ফল নির্ভর করছে উভয় পক্ষের সদিচ্ছা ও নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর।

RELATED NEWS

Latest News