ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ সপ্তম দিনে পৌঁছেছে। শুক্রবার উভয় পক্ষের মধ্যে নতুন করে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় উত্তেজনা বেড়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির সামরিকভাবে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়েছেন।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৬০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে আঘাত হানা হয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ও গবেষণা সংস্থার প্রধান কার্যালয়ও।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানান, “আমরা আকাশে আমাদের দখল আরও শক্তিশালী করছি এবং আক্রমণাত্মক কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। তেহরান, পশ্চিম ইরানসহ আরও অনেক স্থানে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে।”
অন্যদিকে ইরানের রাশত শহরের শিল্পাঞ্চলে শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। তবে ইরানের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় মানুষজন কতটা সতর্কতা পেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলে পাল্টা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় একাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি ছয়তলা ভবনও ক্ষতির শিকার হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচজন সামান্য আহত হয়েছেন।
এর একদিন আগেই ইসরায়েলের বিয়ার শেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে ইরানি হামলায় ৮০ জন রোগী ও চিকিৎসক আহত হন।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওপর হুমকি উচ্চারণ করে বলেন, “যুদ্ধ থামাতে এই ব্যক্তির আর থাকা উচিত নয়।”
এদিকে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও ও দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে যুদ্ধ প্রশমনের সম্ভাব্য কূটনৈতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে জেনেভা রওনা হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অবশ্য ইরানি টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “ইসরায়েলের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কারও সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নই।”
ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলা চালাবে কিনা সে বিষয়ে তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবেন। এই স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে অবস্থান করছে এবং কেবল মার্কিন ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমার মাধ্যমে এটি ধ্বংস করা সম্ভব।
এই মুহূর্তে ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান এখন পর্যন্ত ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১ হাজারের বেশি ড্রোন ছুঁড়েছে, যার বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইরানে ৬৫৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েলেও ২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
যুদ্ধের সপ্তম দিনে পৌঁছেও সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়লেও সামরিক উত্তেজনা কমছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
