Thursday, July 31, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় ট্যাকটিক্যাল বিরতি, খাদ্য সংকট মোকাবেলায় নিরাপদ রুট খুলল ইসরায়েল

গাজায় ট্যাকটিক্যাল বিরতি, খাদ্য সংকট মোকাবেলায় নিরাপদ রুট খুলল ইসরায়েল

ইসরায়েলের সাময়িক যুদ্ধবিরতি, সীমিত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য নিরাপদ রুট উন্মুক্ত, ইউএন ও এনজিওদের প্রশংসা ও আশঙ্কা

গাজার খাদ্য সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে রবিবার ইসরায়েল কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ‘ট্যাকটিক্যাল বিরতি’ ঘোষণা করেছে, যার উদ্দেশ্য জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর জন্য নিরাপদ স্থলপথে ত্রাণ পাঠানোর সুযোগ তৈরি করা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য প্যাকেট আকাশপথে ফেলা শুরু করেছে এবং যুদ্ধকে নাগরিকদের অনাহারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার এই বিরতিকে স্বাগত জানিয়ে জানান, “আমরা মাঠে আমাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। এই সময়সীমার মধ্যে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, সে চেষ্টাই করব।”

তবে অক্সফামের আঞ্চলিক নীতিনির্ধারক বুশরা খালিদি এ পদক্ষেপকে “স্বাগতযোগ্য প্রাথমিক পদক্ষেপ” বললেও মনে করেন, এটি যথেষ্ট হবে না। তার মতে, “কয়েকটি ট্রাক বা এয়ারড্রপ দিয়ে অনাহার বন্ধ করা যাবে না। জরুরি মানবিক জবাব প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতি, পূর্ণ প্রবেশাধিকার এবং স্থায়ীভাবে ব্যাপক সহায়তা প্রবাহ।”

গাজা শহরের তেল আল-হাওয়া এলাকার ৩০ বছর বয়সী সুয়াদ ইশতাইউই বলেন, “আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া হলো আমার সন্তানদের খাওয়াতে পারা।”
৪৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আল-দাদুহ জানান, “আমরা প্রতিদিন আশায় থাকি, আজ হয়তো ত্রাণ আসবে। কিন্তু ক্ষুধা আমাদের ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে।”

এএফপি প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে কিছু মিশরীয় ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে সেগুলো ইসরায়েলের কেরেম শালোম চেকপয়েন্ট দিয়ে যাচাইয়ের পরই প্রবেশ করতে পেরেছে।

ঘোষিত বিরতি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং শুধু সেই সব এলাকায় যেগুলোতে বর্তমানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সরাসরি অভিযান চলছে না, যেমন আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহর।

ইসরায়েল বলছে, এই কার্যক্রম প্রমাণ করে যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষুধা তৈরি করছে, এমন অভিযোগ “ভিত্তিহীন”।

এর আগে ২ মার্চ থেকে আরোপিত অবরোধের পর গাজার অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। শতাধিক এনজিও জানায়, এই পরিস্থিতি “গণঅনাহারে” পরিণত হয়েছে।

যদিও মে মাসের শেষ দিকে কিছু ত্রাণ প্রবেশ শুরু হয়, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, ইসরায়েলের সীমাবদ্ধতা এখনো অতিরিক্ত এবং গাজার ভিতরে সড়ক ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

শনিবার ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্স জানায়, অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে ইসরায়েলি হামলা ও গুলিতে, যাদের অনেকে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষায় ছিলেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানায়, তারা “মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে খাদ্য প্যাকেট বিমান থেকে ফেলে দিয়েছে”।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “এয়ারড্রপ দিয়ে খাদ্যসংকটের সমাধান সম্ভব নয়। এটি ব্যয়বহুল, অকার্যকর এবং কখনো কখনো জীবননাশের ঝুঁকি বাড়ায়।”

এদিকে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ পরিচালিত মানবিক বোট ‘হানদালা’ আটক করে আশদোদের বন্দরে নিয়ে যায়। অ্যাডালাহ নামক আইন সহায়তা সংস্থা জানায়, তারা আটক ২১ জন কর্মী ও সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও অনুমতি পায়নি।

গাজায় হতাহতের সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা কঠিন। এএফপি’র হিসেবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৭৩৩ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

এই মানবিক সঙ্কটের সময় ইসরায়েলের সাময়িক বিরতি কিছুটা স্বস্তি আনলেও, স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।

RELATED NEWS

Latest News