গাজা শহরের ৪০ শতাংশ এলাকা এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সোমবার থেকে প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে এই শহরকে পূর্ণভাবে দখল করার প্রস্তুতি চলছে। সামরিক সূত্রে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, উত্তর গাজা অঞ্চলে অভিযান তীব্র করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
গাজা সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, বৃহস্পতিবার শহরে ইসরায়েলি হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। পুরো গাজা অঞ্চলে অন্তত ৬৪ জন মারা গেছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, একটি তাঁবু লক্ষ্য করে বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিন শিশু।
ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন বলেন, ‘‘আমরা গাজা শহরের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছি। অভিযান আগামীদিনে আরও প্রসারিত ও তীব্র হবে।’’ তিনি হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে ‘‘পরাজিত’’ না করা পর্যন্ত চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
যুদ্ধের ফলে দুই মিলিয়নের বেশি গাজা বাসিন্দার মধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যেই অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নতুন অভিযানের ফলে আরও এক মিলিয়ন মানুষ দক্ষিণের দিকে সরানো হতে পারে।
জাতিসংঘ গত মাসে গাজা শহরে এবং এর আশপাশে খরা ঘোষণা করেছে। আল-শিফা হাসপাতালে নিহত ও আহতদের রাখা হয়েছে, যেখানে মৃতদেহ সাদা কফনে মোড়া পড়ে আছে। এক মহিলা মৃত ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন, চোখে চোখে কান্নার স্রোত।
ইউনিসেফের মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘গাজা শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুরু হয়ে গেছে। এই তীব্র সামরিক অভিযান মৌলিক সেবার ধ্বংস ঘটাচ্ছে। তাত্ক্ষণিকভাবে খাদ্য পৌঁছানো না হলে আরও শিশুরা ক্ষুধার্ত হবে।’’
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তেরেসা রিবেরা এই যুদ্ধে ‘‘গণহত্যা’’ শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং ২৭ সদস্যের ব্লককে সমালোচনা করেছেন। ইসরায়েল এই শব্দ প্রত্যাখ্যান করেছে।
মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন, তিনজন শিশু। ইসরায়েলি সেনারা জানান, তারা সেই হামলার বিষয়ে ‘‘অজ্ঞাত’’। এফপির চিত্রগুলো দেখাচ্ছে, ইয়োসেফ সুলেইমান তার পরিবারের ধ্বংসপ্রাপ্ত তাঁবুর মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
গাজায় মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রবেশাধিকার সীমিত হওয়ায় স্বাধীনভাবে নিহত ও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য যাচাই করা কঠিন। হামাস জানায়, তারা তেহরানের সঙ্গে আলোচনা করছে যুদ্ধে সমাধান আনার জন্য।
হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবর হামলায় প্রায় ১,২১৯ জন নিহত হন। ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে গাজায় অন্তত ৬৪,২৩১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।