গাজা যুদ্ধের অবসান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জোটে ফাটল দেখা দিয়েছে, যা সরকারকে আগাম নির্বাচনের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনা অনুসারে গাজা অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং হামাসকে প্রশাসনিক ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা হবে। তবে যারা সহিংসতা পরিত্যাগ করে অস্ত্র জমা দেবে, তারা রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ হতে পারবে।
নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করলেও তার কট্টর মিত্ররা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, “যে সংগঠন ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় এনেছে, তাদের পুনরুজ্জীবনের কোনো সম্ভাবনাই আমরা মেনে নেব না।” তিনি সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাহারের হুমকি দেন।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচও ট্রাম্পের আহ্বানে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ রাখাকে “ভুল পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দেন। তার দাবি, এতে ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।
বর্তমানে এই দুই মন্ত্রীর দল কনেসেটের ১২০ আসনের মধ্যে ১৩টি আসন দখল করে রেখেছে। তারা সরকার থেকে সরে গেলে নেতানিয়াহুর জোটের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাস আংশিক সমর্থন জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, জিম্মিদের মুক্তির আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত এবং গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি “ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোয়” যোগ দিতে আগ্রহী।
এ অবস্থায় নেতানিয়াহু একদিকে ডানপন্থী মিত্রদের চাপ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল ও জিম্মি পরিবারের দাবির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ক্লান্তি ইসরায়েলি জনগণের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়িয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং আব্রাহাম চুক্তির আওতায় আরও মুসলিম রাষ্ট্রকে যুক্ত করা। তবে সৌদি আরব স্পষ্ট জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধের অবসান ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু না হলে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
রবিবার ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান জানান, কিছু হামলা বন্ধ করা হয়েছে তবে কোনো যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়নি। ইসরায়েলি বিমান হামলায় সপ্তাহান্তে গাজায় আরও কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিচেল বারাক মনে করেন, নেতানিয়াহুর সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যদিও তিনি মনে করেন, অবিলম্বে পতনের সম্ভাবনা কম কারণ বিরোধী দল ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে।
বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ নেতানিয়াহুকে আগাম নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে “চরমপন্থী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অংশীদারদের” কারণে সরকার ভেঙে না যায়।