Thursday, November 13, 2025
Homeজাতীয়ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ২০১২ সালের নিয়োগে জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির প্রমাণ, তদন্ত কমিটির সুপারিশ...

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ২০১২ সালের নিয়োগে জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির প্রমাণ, তদন্ত কমিটির সুপারিশ ৪৭ কর্মকর্তার বরখাস্ত

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রকাশ, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে ১২টি প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগ; প্রধান অভিযুক্ত সাবেক মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ২০১২ সালে জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ১২টি প্রথম শ্রেণির পদে ৪৭ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।

সহকারী পরিচালক, প্রোগ্রাম কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তা, পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়।

তদন্তে দেখা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা টানা ১৩ বছর ধরে সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করেছেন।

গত ১৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে নিয়োগ বাতিল ও সংশ্লিষ্ট ৪৭ কর্মকর্তাকে পদচ্যুত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৫ মার্চ বোর্ড সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বোর্ডের অনুমোদনে নিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করা হয়। জন প্রশাসন, অর্থ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হলেও কেউ সভায় অংশ নেননি, যা নিয়োগকে অবৈধ করে তোলে।

নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব মো. রেজাউল করিম অনিয়মের অভিযোগে সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষার নম্বর পরিবর্তন ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর পেন্সিলে সংশোধন করে পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হয়। যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বা আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, তৎকালীন মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, পরিচালক তাহের হোসেন ও হারুন-অর-রশিদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে এই অনিয়ম করেন।

স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
তদন্তে উঠে এসেছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে সাতজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা, যা ছিল তৎকালীন চেয়ারম্যান শামীম মোহাম্মদ আফজাল ও আওয়ামী লীগ নেতা রাম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নিজ জেলা।

আফজালের ভাগ্নি ফাহমিদা বেগম লিখিত পরীক্ষায় ৬০ এর মধ্যে ৩০ পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় পেয়েছেন ২৮। তার ভাতিজা মো. শাহ আলম ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদে প্রোডাকশন ম্যানেজার পদে নিয়োগ পান। মোকতাদির চৌধুরীর আত্মীয় মো. সুজন আহমেদ চৌধুরীকেও উচ্চ নম্বর দেখিয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গবেষণা কর্মকর্তা ও প্রোডাকশন ম্যানেজারসহ বিভিন্ন পদে উচ্চ নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়।

বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিযোগ
নওগাঁর মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন ও রাজবাড়ীর মোহাম্মদ আমিনুল হক জানান, তারা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগপত্র পাননি বা পরে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “আমার জায়গায় অবৈধভাবে অন্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

অভিযুক্তদের অবস্থান
২০১২ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৭ কর্মকর্তা আইনি নোটিশ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসান হাবিব বলেন, “এই বিষয়টি তিনবার নিষ্পত্তি হয়েছে—প্রথমে হাইকোর্টে, পরে অডিট বিভাগে এবং সর্বশেষ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।”

তিনি দাবি করেন, “২০২৩ সালে হাইকোর্ট নিয়োগ বৈধ ঘোষণা করে রিট খারিজ করে দেন। ২০২১ সালের বিশেষ অডিটে কিছু প্রশ্ন উঠলেও তা নিষ্পত্তি হয়। ২০২৫ সালে দুদক ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেয়। তাই পুনরায় তদন্ত করা কর্মকর্তাদের হয়রানি ছাড়া কিছু নয়।”

সূত্র জানায়, ১১ নভেম্বর কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পাঠিয়ে পুনরায় তদন্ত বাতিল এবং পদোন্নতি ও সিনিয়রিটি পুনঃবহালের দাবি জানান।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান অবস্থান
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আবদুস সালাম খান বলেন, “অনিয়মের ধরন অনুযায়ী আমরা তিনটি ভাগ করছি—বড়, মাঝারি ও ছোট। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

RELATED NEWS

Latest News