আয়ারল্যান্ড সরকার ইসরায়েলি বসতিগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে সীমিত করার পথে রয়েছে। ব্যবসায়ী মহল ও মার্কিন বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে প্রস্তাবিত আইনে সেবা খাত বাদ পড়তে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ইসরায়েলের গাজা হামলার সমালোচক দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড অন্যতম। তবে স্পেনের মতো দেশ যেখানে নীতি গ্রহণে এগিয়েছে, আয়ারল্যান্ড সেখানে ভিন্ন চাপের মুখে। দেশটিতে মার্কিন মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা আয়ারল্যান্ডের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১১ শতাংশ এবং তাদের দেওয়া কর রাষ্ট্রীয় রাজস্বের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত যোগান দেয়।
প্রায় এক বছর ধরে আয়ারল্যান্ড সরকার ইসরায়েলি দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বসতিগুলো থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে আসছে। এ উদ্যোগে ইসরায়েল, মার্কিন আইনপ্রণেতা ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষ করে মার্কিন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—এই যুক্তিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরকারের ওপর চাপ বাড়ায়।
সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এখন আইনটির পরিধি কেবল পণ্যে সীমিত রাখার সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে মূলত কিছু ফলমূল ও কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত হবে, যেগুলোর বার্ষিক আমদানি মূল্য মাত্র দুই লাখ ইউরোর মতো। তবে সেবা খাত বাদ পড়লে সফটওয়্যারসহ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাইমন হ্যারিস জানিয়েছেন, সেবা খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা আইনগতভাবে সম্ভব কি না সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ শিগগিরই পাওয়া যাবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত পদক্ষেপ আয়ারল্যান্ডের একক সিদ্ধান্তের চেয়ে কার্যকর হবে।
ব্যবসায়ী সংগঠন আইবিইসি প্রকাশ্যে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শাস্তি দিতে পারে যদি তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
রাজনৈতিকভাবে আয়ারল্যান্ডের অবস্থান জটিল হয়ে উঠেছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। শুধু গত বছরই আয়ারল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে ৭২ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য রপ্তানি করেছে। একইসঙ্গে ডাবলিন ইউরোপে মার্কিন প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল ও আর্থিক খাতের অন্যতম কেন্দ্র।
এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য কয়েকটি দেশ—স্লোভেনিয়া, বেলজিয়াম, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস—ইসরায়েলি বসতি থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আয়ারল্যান্ডও সেই তালিকায় যোগ দিতে চাইছে, যদিও এর প্রভাব নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে মতভেদ রয়েছে।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য অ্যালিস-মেরি হিগিনস বলেন, “বিনিয়োগকারীরা আয়ারল্যান্ড ছেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা অতিরঞ্জিত। প্রশ্ন হলো, দখলকৃত ভূমি থেকে আসা পণ্য ও সেবাকে কি আমরা বৈধতা দেব, নাকি প্রতিরোধ করব।”
