ইরানে ১২ দিন ধরে চলমান সংঘাতে কতগুলো মিসাইল ও বোমা ব্যবহার করা হয়েছে, তা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফরদু, ইসফাহান ও নাটাঞ্জ পরমাণু স্থাপনায় ১৪টি ১৩,৬০০ কেজি ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা এবং ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
ভিয়েনা-ভিত্তিক নিরস্ত্রীকরণ ও অ-প্রসারণ কেন্দ্রের গবেষক গাউখার মুখাজানোভা জানান, বাস্তবিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
২৩ জুন ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “স্যাটেলাইট চিত্রে কিছু ক্ষতি দেখা গেলেও প্রকৃত পরিস্থিতি এখনো অজানা। বিশেষ করে ফরদুর ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে কী ঘটেছে, তা পরিষ্কার নয়।”
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ধারণা করছে, আক্রান্ত এলাকাগুলোতে রেডিওএকটিভ ও রাসায়নিক দূষণ থাকতে পারে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে হাজারো সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সেন্ট্রিফিউজগুলো ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড (UF6) নামক উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল পদার্থ দিয়ে চলে।
যদিও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোর বাইরে কোনো অতিরিক্ত বিকিরণ মাত্রা মাপা যায়নি, তবে ভেতরে বিষাক্ত উপাদানগুলোর সম্ভাব্য লিকেজ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি। আইএইএ এর পরিদর্শকদের এসব কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি এখনো নেই।
দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ঝুঁকি
পরিবেশ গবেষক রুজবেহ এসকানদারি বলেন, “আমরা এখনো অনেক কিছু জানি না, আর সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
তিনি জানান, “ইরানের কর্তৃপক্ষ সব সময় বলে থাকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বর্তমানে সম্ভাব্য পরিবেশ বিপদের বিষয়ে স্থানীয় জনগণ পর্যন্ত কিছুই জানে না।”
এসকানদারি আরও বলেন, এপ্রিলে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর নগরী বান্দর আব্বাসে একটি বড় বিস্ফোরণে রাসায়নিক পদার্থ জ্বলে গিয়ে ব্যাপক ধোঁয়া ও দূষণ ছড়ায়। এতে স্থানীয় বাতাসে স্যুট, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
এমনই ধোঁয়ার মেঘ ইসরায়েলি হামলার পর বিভিন্ন ভিডিওতেও দেখা গেছে।
এসকানদারি বলেন, “এমন দূষক পদার্থ মাটিকে দূষিত করে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মাটির দূষণ সবচেয়ে মারাত্মক, কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত পরিবেশগত ক্ষতি।”
মাটির উপরিভাগে এসব দূষক বহু বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে, যা ফলন হ্রাস এবং ভূমি পুনরুদ্ধারে বড় বাধা তৈরি করে।
ইরান-ইরাক যুদ্ধের প্রভাব এখনো বিদ্যমান
এসকানদারি বলেন, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ক্ষতির অভিজ্ঞতা রয়েছে ইরানের।
তখন পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুজেস্তান, ইলাম ও কেরমানশাহ প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষ করে খুজেস্তান প্রদেশ, যেখানে বহু তেল শোধনাগার ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, ছিল বোমাবর্ষণের প্রধান লক্ষ্য।
অনেক উর্বর কৃষিক্ষেত্র পরিত্যক্ত হয়ে যায়। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ঐ এলাকায় ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও চর্মরোগের হার বেড়েছে।
এসব ধ্বংসাবশেষ, রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মিলে আজও ওই অঞ্চলকে সংকটে রেখেছে।
সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খুজেস্তান প্রদেশ গত ২০ বছরে ইরানের সর্বোচ্চ অভিবাসন প্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেখানে রয়েছে বহু প্রাচীন শহর ও একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।