যাকে একসময় অপ্রতিরোধ্য বলা হতো, সেই ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ইরানের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ভেদ করছে আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং, অ্যারো কিংবা থাডের মতো বিশ্বসেরা প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হামলা ঠেকাতে পারছে। তবে বাকি ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরাইলের সামরিক সদরদপ্তর ‘কিরিয়া’ এবং মোসাদের একটি কেন্দ্র ধ্বংস করেছে।
এই হামলার মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—ইসরাইলের বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আদৌ কতটা কার্যকর?
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে রয়েছে স্বল্পপাল্লার আক্রমণ প্রতিরোধে আয়রন ডোম, মাঝারি পাল্লার জন্য বারাক-৮ ও ডেভিডস স্লিং এবং দূরপাল্লার আক্রমণ ঠেকাতে অ্যারো-২, অ্যারো-৩ ও থাড সিস্টেম। পাশাপাশি, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের কৌশল রয়েছে।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান তিনটি ধাপ হল—রাডার শনাক্ত করা, কমান্ড সেন্টার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। সাধারণত একটি শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে দুটি প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
তবুও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান একইসঙ্গে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও ডিকয় পাঠিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করছে।
ইরানের ফাত্তাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুতগামী এবং হাইপারসনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম। এটি গতিপথ পরিবর্তন করে আঘাত হানায় ধরা পড়ে না সহজে।
এছাড়া হোভেইজেহ নামের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মাটি ঘেঁষে উড়ে এবং বারবার দিক পরিবর্তন করতে পারে, যা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেয়।
অনেকে মনে করছেন, এই যুদ্ধের পরিণতি নির্ভর করছে দুই পক্ষের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মজুদের উপর। কার হাতে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে এবং কে কতদিন প্রতিরক্ষায় টিকতে পারবে—তা-ই ঠিক করবে যুদ্ধ কতদূর গড়াবে।
ইরান ও ইসরাইলের সামরিক শক্তির এই লড়াইতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গভীরভাবে নজর রাখছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে শুধু প্রযুক্তিই নয়, কূটনৈতিক কৌশলও হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ।