Sunday, June 22, 2025
Homeআন্তর্জাতিকইরান-ইসরায়েল সংঘাতে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান, সীমান্ত বন্ধ ও নিরাপত্তা জোরদার

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান, সীমান্ত বন্ধ ও নিরাপত্তা জোরদার

ইসরায়েলের বিমান হামলার প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তানে পাঁচটি সীমান্ত বন্ধ করল ইসলামাবাদ

ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিবেশী পাকিস্তানে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে পাঁচটি সীমান্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ, নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায়।

গত জানুয়ারিতে ইরান ও পাকিস্তান পরস্পরের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। তবে ১৭ মাস পর ইসরায়েল যখন ইরানে বোমা হামলা চালায় এবং জেনারেল ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করে, পাকিস্তান দ্রুত এ পদক্ষেপের নিন্দা জানায়।

পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে এবং এই আগ্রাসনের জন্য দোষী পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।”

মানবিক প্রভাব ও সীমান্ত পরিস্থিতি

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে ইতিমধ্যে ইরানে ২২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। পাল্টা হামলায় ইসরায়েলেও ২০ জনের বেশি নিহত এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। গত কয়েক দিনে ইরান থেকে প্রায় ৫০০ পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরে এসেছেন, যাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও তীর্থযাত্রী রয়েছে।

তাফতান সীমান্তের সহকারী কমিশনার নাঈম আহমেদ বলেন, “সোমবার ৪৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৫০০ এর বেশি তীর্থযাত্রী ইরান থেকে তাফতান সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন।”

বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেলুচিস্তানে ইরান সীমান্তবর্তী এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যেমন বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ)-এর সদস্যরা আশ্রয় নিতে পারে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক গবেষক আব্দুল বাসিত বলেন, “যুদ্ধ পরিস্থিতি বাড়লে এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা পাকিস্তানে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে, এ কারণেই সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।”

কূটনৈতিক ভূমিকা ও উদ্বেগ

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পার্লামেন্টে বলেন, “আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনা করছি। ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েল আর হামলা না চালালে তারা আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত।”

মধ্যপ্রাচ্য গবেষক উমর করিম বলেন, “পাকিস্তান হয়তো এই সংঘাতে সরাসরি জড়াবে না, কিন্তু দ্রুত যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী। ইসরায়েলি প্রভাব সীমান্তে ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।”

স্মরণ করিয়ে দেয় আফগানিস্তান সংকট

১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় থেকে পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের ঢল নামে। ২০২৩ সালে পাকিস্তান তাদের ফেরত পাঠানো শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান চায় না আবার সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হোক।

ধর্মীয় ভারসাম্য ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

পাকিস্তানে শিয়া সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ। সাম্প্রদায়িক ভারসাম্য রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইহসানুল্লাহ মেহসুদ বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমর্থন দিলে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সীমান্তে নিরাপত্তা, শরণার্থী প্রবাহ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি—সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তান এখন এক চরম সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইসলামাবাদ শান্তি বজায় রাখতে এবং নিজের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

RELATED NEWS

Latest News