তেহরানের কেন্দ্রস্থলে শনিবার সকালে শুরু হয়েছে রাষ্ট্রীয় জানাজার অনুষ্ঠান, যেখানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত প্রায় ৬০ জন, তাদের মধ্যে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষদের স্মরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা) এ শোকানুষ্ঠান শুরু হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
ইরানের জাতীয় পতাকা দ্বারা মোড়ানো কফিনগুলোতে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের ছবি ছিল। অনুষ্ঠানটি ইরানি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয়, যেখানে কালো পোশাকে মানুষের ঢল, হাতে শহীদদের ছবি ও জাতীয় পতাকা দেখা যায়।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান ও ইসরায়েল উভয়পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে “তেমন কিছুই নয়” বলে অবহিত করেন।
এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প Truth Social প্ল্যাটফর্মে খামেনিকে নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমি জানতাম তিনি কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং চাইলে ইসরায়েল ও মার্কিন বাহিনী দিয়ে তাকে হত্যা করা যেত।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমি তাকে রক্ষা করেছি এবং তিনি ধন্যবাদও জানাননি।”
এই মন্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, “ট্রাম্প যদি সত্যিই কোনো চুক্তি চান, তবে এই অপমানজনক ভাষা বাদ দেওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “ইরানি জনগণ হুমকি ও অপমান মেনে নেবে না।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ২৮ জন।
আজকের জানাজার পর শহীদদের কফিনগুলো তেহরানের আজাদি স্কয়ার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। শহীদদের মধ্যে রয়েছেন ইরানি বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, তাঁর স্ত্রী ও কন্যা, পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি এবং গার্ড কমান্ডার হোসেইন সালামি।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে দশকের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইরান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এই প্রচারণা অতিরঞ্জিত এবং তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
ইসরায়েল বলছে, ইরানকে পরমাণু বোমা অর্জন থেকে যেকোনো মূল্যে ঠেকানো এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। তবে ইরান বলেছে, তাদের কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
এই শোকানুষ্ঠান ইরানের ইতিহাসে একটি ‘ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল।