ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “অন্যায় ও অপরাধমূলক যুদ্ধ” শুরুর অভিযোগ তুলেছেন। শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ইসরায়েল যে আক্রমণ শুরু করেছে তা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।
আরাঘচি বলেন, “ইরান এখন একটি সুস্পষ্ট আগ্রাসনের মুখোমুখি, যা গত দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনে চালানো গণহত্যার ধারাবাহিকতা।” তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল ইতিমধ্যেই আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিকাঠামো ও এমনকি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বক্তব্যে তিনি জানান, “এই হামলায় শত শত ইরানি নিহত ও আহত হয়েছেন। এমনকি শান্তিপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলোতেও হামলা হয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) দ্বারা পূর্ণ পর্যবেক্ষণে ছিল।”
তিনি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে জাতিসংঘ চার্টারের ২(৪) অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবে ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইরানের প্রতিক্রিয়াকে বৈধ বলেন। “আমরা বারবার বলেছি, আমরা নিজেরা আত্মরক্ষা করছি এবং এটি আমাদের স্বাভাবিক অধিকার।”
আরাঘচি আরও বলেন, “মানবাধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় যে আন্তর্জাতিক কাঠামো আমরা আট দশক ধরে গড়ে তুলেছি, এখনই তা কার্যকর করার সময় এসেছে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তার বক্তব্যের ঠিক আগে, জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মেরন ইরানকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান। তিনি বলেন, “ইসরায়েল আলোচনার অংশ নয়, তাই ইউরোপীয় মিত্রদের উচিত ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া, যার মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গুটিয়ে নেওয়া এবং আঞ্চলিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করাও অন্তর্ভুক্ত।”
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এই সংঘাত নতুন মাত্রা নিয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনার জেরে পশ্চিম এশিয়ায় মানবিক সংকট আরও জটিল আকার নিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। জাতিসংঘে দেওয়া ইরানের এই অভিযোগ এবং এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।